সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ মার্চ, ২০১৯ ২৩:৩৬

গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন নয়: অরুন্ধতী

গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন নয় বলে মনে করেন ভারতের প্রখ্যাত লেখক অরুন্ধতী রায়। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে মাইডাস সেন্টারে ‘আটমোস্ট এভরিথিং’ শিরোনামে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় লেখক ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতী বলেন, জাতীয়তাবাদের যে প্রচলিত ধারণা আছে। আমি তা ধারণ করিনা। আমি একজন ভ্রাম্যমাণ প্রজাতন্ত্রবাদ।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন না। গণতন্ত্র রক্ষা করা হয় কিছু মানুষের জন্য। আমি এ গণতন্ত্রের পক্ষে না।

অরুন্ধতী বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের জন্য এসেছি। আমার এখানে পাঠক রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ ছিল। আমার দুটো সত্ত্বা। লেখক সত্ত্বা এবং কর্মী সত্ত্বা। দুটো সত্বাকেই ধারণ করি আমি।

আলোচনার মঞ্চে অরুন্ধতীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম। শুরুতে একটি লিখিত বক্তব্য পড়েন অরুন্ধতী। এরপর শহীদুল আলমের প্রশ্নে উত্তর দেন তিনি। পরে নানা বিষয়ে কথা বলেন অরুন্ধতী।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব ‘ছবিমেলা’-য় যোগ দিতে অরুন্ধতী রায় সোমবার ঢাকায় আসেন। উৎসবের অংশ হিসেবে ‘আটমোস্ট এভরিথিং’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

গত বছর নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় শহিদুল আলম গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে খোলা চিঠি লিখেছিলেন অরুন্ধতী রায়।

ভারতীয় এই লেখক মনে করেন, উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে  অন্ধ ধর্মবিশ্বাস আর অর্থনীতির ভ্রান্ত ধারণা।

“ধর্ম আর অর্থনীতি নিয়ে এত ভ্রান্ত ধারণা জন্মেছে মানুষের মনে! ক্রমেই বাড়ছে সন্ত্রাসবাদ। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে। আর তা মোকাবেলায় দেশগুলো যেন গণতন্ত্র ছেড়ে সামরিক পন্থা বেছে নিচ্ছে।”

ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্র চর্চার পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রম, পরিবেশ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা নিয়ে কথা বলেন অরুন্ধতী; শোনান নিজের লেখক জীবনের গল্পও।

অনুষ্ঠানে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের সঙ্গে আলাপে বুকারজয়ী লেখক অরুন্ধতী রায় চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের সঙ্গে আলাপে বুকারজয়ী লেখক অরুন্ধতী রায় চৌধুরী।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সাহিত্যাঙ্গনেও। তবে কি প্রযুক্তির আধিপত্যে সাহিত্যের আবেদন কমবে- প্রশ্ন উঠেছিল এই অনুষ্ঠানে।

অরুন্ধতী মনে করেন, সাহিত্যের উপাদান গুণগত মানসম্পন্ন হলে তার আবেদন কখনও ফুরাবে না।

“লেখালেখি করতে এলে অবশ্যই এবার লেখার গুণগত মান নিয়ে ভাবতে হবে। যা তা লিখে ফেললেই কিন্তু হবে না। পাঠককে ভালো কিছু দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকতে হবে। প্রযুক্তি যতই আসুক না কেন, পড়ুয়াদের কাছে সাহিত্যের আবেদন কিন্তু কখনও ফুরাবে না।”

প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ দিয়েই সাড়া ফেলেছিলেন অরুন্ধতী রায়, পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশের বরিশালের যার শেকড় রয়েছে। প্রথম উপন্যাসের ম্যান বুকার জয়ের ২০ বছর পর প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’।

২০ বছর বিরতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি আসলে এক মুক্ত মানুষ থাকতে চেয়েছি। এতটা চাপ নিতে চাইনি। প্রথম উপন্যাস লেখার পরই পরবর্তী উপন্যাস খুব দ্রুত প্রকাশ করে জনপ্রিয় হব, এই পুরস্কার পাব, সেই পুরস্কার পাব, এমনটা আমি কখনও ভাবিনি। এসব কঠিন ভাবনার মধ্যে আমি নাই।

“আমি তখনই ভারতের রাজনীতি নিয়ে ভাবতে শুরু করি। রাজনীতির ভাবনাগুলো সব এক করে নিয়ে পরের উপন্যাসটি লিখতে শুরু করি ২০১২ সালে।”

ভারতের মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রগতিশীলদের ধ্যানধারণার বিপরীতে অবস্থান নেওয়ায় তাকে ‘ভারতবিরোধী’ আখ্যাও পেতে হয়েছে একসময়। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধেও মতামত প্রকাশ করছেন তিনি।

অরুন্ধতী বলেন, “ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা চায়, আমি তাদের মতো কথা বলি। প্রথম দিকে ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগত। আমার জাতীয়তাবাদ নিয়েও প্রশ্ন এসেছে বিভিন্ন সময়ে। আমার মতামত প্রকাশের পর চারপাশ থেকে ঘৃণাবাক্য বর্ষণ শুরু হল।”

ভারত, পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ- মুক্তমনা লেখকরা তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নির্মাণে এখনও লড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“হাজারো সমস্যার পর লেখকরা টিকে থাকার লড়াই করছেন। কখনও তারা জেতেন, কখনও হারেন। আর হারের পর একেবারে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন কেউ কেউ। নোংরা লাগে ব্যাপারটা।”
উপমহাদেশের রাজনীতিবিদরা গণতান্ত্রিক উন্নয়নের পথে হাঁটতে গিয়ে নীতি ভুলে বসে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন অরুন্ধতী।

“কখনও কখনও তাদের উন্নয়ন কাজের জন্য জনগণকে এমন সব মূল্য চুকাতে হয়!  নীতির ঠিক থাকে না বলে উন্নয়নের নামে চলে সব বেআইনি কার্যক্রম।”

প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিগুলোর অর্থের জোগান কোথা থেকে আসে, সেদিকেও নজর রাখা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

স্থাপত্যের ছাত্রী অরুন্ধতী প্রথমে ঝুঁকেছিলেন চলচ্চিত্রে। ১৯৮৫ সালে ‘মাসি সাহিব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। পরে চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করেন। তার চিত্রনাট্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পায়।

প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এর জন্য ১৯৯৭ সালে ম্যান বুকার পান অরুন্ধতী। তার দ্বিতীয় উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত