সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ মার্চ, ২০১৯ ১৪:০৪

ইউএস-বাংলা ট্র্যাজেডি: এখনো আটকে আছে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ

নেপালে দুর্ঘটনায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে আইনি জটিলতায় আটকে আছে বেশ কয়েকজন যাত্রীর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া। উত্তরাধিকার নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭১ জন আরোহী নিয়ে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-২১১ ফ্লাইটটি। নেপালে পৌঁছানোর পর স্থানীয় সময় ২টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৩টা ৫ মিনিট) বোম্বাডিয়া কোম্পানির তৈরি ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ মডেলের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

ওই দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের ২৭ জন, নেপালের ২৩ জন ও চীনের একজন নাগরিকসহ মোট ৫১ জন নিহত হন। আর আহতদের মধ্যে মালদ্বীপের একজন, নেপালের ১০ জন ও বাংলাদেশর ৯ জন। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ছিলেন ওই ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্বে। তার সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ। পাইলট, ক্রু ও যাত্রী মিলে ৫১ নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর। আহতদের এখনো তাড়া করে সেই দুর্বিষহ স্মৃতি। এই দুর্ঘটনা বাংলাদেশি প্লেনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।

এ ঘটনার পর নিহত ও আহত যাত্রীদের মধ্যে ৩১ জনকে বিমা পরিশোধ বা ক্ষতিপূরণ দিলেও বাকি ৪০ জনের ক্ষতিপূরণ এখনো বুঝিয়ে দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন জটিলতার কারণেই ৪০ জনের বিমার অর্থ পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে বলে জানান এয়ারলাইন্সটির এক কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, দুর্ঘটনার চার সপ্তাহের মধ্যে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সকে বিমানটির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়। এছাড়া নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫১ হাজার ১২০ ডলার নির্ধারণ করেছ সংস্থাটি। তবে আহতদের ক্ষতির পরিমাণ, চিকিৎসা ব্যয় সব কিছু বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয়েছে। নিহত ১৯জন বাংলাদেশির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। নিহত আটজনের পরিবার এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহত ৯জন বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তিনজন এখনও পাননি। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ ছাড়াই বাংলাদেশি ২৫জন আহত-নিহতদের পরিবারকে ১১ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৬ টাকা দিয়েছে সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স।

সূত্র জানায়, নেপালের আহতরা এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। নিহতদের মধ্যে ২ জনের পরিবারকে ৫১ হাজার ১২০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ককপিট ও কেবিন ক্রুরা দুটি ইনস্যুরেন্স সুবিধা পাবেন। বিমানটির যাত্রী হিসেবে একটি, অপরটি পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির আওতায়। বিমানটির যাত্রী হিসেবে ক্ষতিপূরণ ছাড়াও অতিরিক্ত ৫০ হাজার ডলার করে পাবেন পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির আওতায়। ইতোমধ্যে বিমানটিতে চারজন ক্রুর মধ্যে দুইজনের পরিবারকে যাত্রী বিমা ও পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে ক্রুদের মধ্যে আইনি জটিলতায় নাবিলার পরিবারকে কোনও ধরনের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স। পাইলট আবিদ সুলতানের পরিবারকে যাত্রী বিমার টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনও দেওয়া হয়নি পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির টাকা।

সূত্র জানায়, নিহতদের ক্ষতিপূরণ পাবেন তার উত্তরাধিকারীরা। তবে উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করতে হবে পারিবারিক আদালতে। নিহতের কে ক্ষতিপূরণের উত্তরাধিকারী হবেন, তা আদালতে নির্ধারণের পর দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিপূরণ। অন্যদিকে আহত যাত্রীদের সকল চিকিৎসা ব্যয় বহন করছে ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শেষে আহতদের দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণের টাকা। চিকিৎসা শেষ না হওয়ায় অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত