সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ মার্চ, ২০১৯ ১৭:০৪

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি-যেন এই দিনটা গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফলটা যেন বাংলার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারি, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি এবং আর্থসামাজিক ভাবে যেন আমরা উন্নত হতে পারি, উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে যেন একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যার সুফল দেশবাসী পেয়েছে।’

এক সময় বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর দুর্যোগের দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে অবমাননা করার কথা স্মরণ করে এজন্য দেশবাসীর মত তাঁর নিজেরও মনঃকষ্ট ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কারণেই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে চেষ্টা করেছে কত দ্রুত দেশটার আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা যায় এবং উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী দেশের ১৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গৌরবময় ও অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৯ এ ভূষিত করেন।

গত ১০ মার্চ এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে সরকার। পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তিগণ হচ্ছেন-স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জ্বল হায়দার চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ এটিএম জাফর আলম (মরণোত্তর), এ কে এম মোজাম্মেল হক, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. কাজী মিসবাহুন নাহার, আব্দুল খালেক (মরণোত্তর) ও অধ্যাপক মোহাম্মাদ খালেদ (মরণোত্তর), শওকত আলী খান (মরণোত্তর), চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম, সমাজ সেবায় ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ, সংস্কৃতিতে মুর্তজা বশীর, সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অধ্যাপক ড. হাসিনা খাঁন। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব এগ্রিকালচারকে (বিআইএনএ) এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

পুরস্কার হিসেবে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি পদক এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের পরিচিতি তুলে ধরেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিচারপতিগণ, সংসদের সদস্যগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক দশকের প্রচেষ্টার ফলে এই অর্থবছরের শেষ নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি আমরা ৮ ভাগে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭শ ৫১ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯শ’ নয় মার্কিন ডলার হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে আজকে বাংলাদেশকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে। এটটুকুই আমাদের তৃপ্তি। বিশ্বে বাংলাদেশকে আমরা এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিপুল ভোটে তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় নিয়ে আসায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, তাঁরা আমাদেরকে আস্থায় নিয়েছেন, বিশ্বাস রেখেছেন, আমাদের ভোট দিয়ে আবার তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং সামনে আরও কিছুদিন আমরা সময় পাচ্ছি, এদেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

তাঁর এবং দলের চলার পথ সবসময়ই কণ্টকাকীর্ণ ছিল উল্লেখ কওে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের চলার পথ কখনই সহজ ছিল না।’

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারি যখন পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমার বা আমার পরিবারের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো তখন আমরা সেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম যে, দুর্নীতি কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা না করতাম তাহলে কখনই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পরতাম না।

তিনি বলেন,‘ সততাই হলো সবথেকে বড় শক্তি। আর সেই শক্তি ছিল বলেই সকল ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছিলাম।’

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণর সিদ্ধান্তে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আমরা স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে পেরেছি, সেজন্য আমরা নিজেরেকে ধন্য মনে করি। আমরা গুণীজনকে সম্মান জানাতে পেরেছি। তবে, আমাদের দেশ ও সমাজের আনাচে-কানাচে আরও এমনি বহু গুণীজন ছড়িয়ে রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত