সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ এপ্রিল, ২০১৯ ১২:৫৪

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: অধ্যক্ষের ভাগ্নিসহ আটক ২

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার এজহারভুক্ত আসামি ও মামলার প্রধান আসামি ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তারা জোবায়েরকে আটক করেন। পরে রাতেই সোনাগাজী পৌর এলাকার চনচান্দিয়ার বাসা থেকে পপিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত জোবায়ের আহমেদ সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলি এলাকার আবুল বশারের ছেলে। আর পপি অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের সহপাঠী। নুসরাতের মত পপিও এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

এ নিয়ে মামলায় এজহারভুক্ত তিনজনসহ দশজনকে গ্রেপ্তার করা হল, যাদের মধ্যে সাতজন কারাগারে এবং বাকিদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।   

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানির’ অভিযোগ এনে মার্চে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার। সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষ তার অনুসারীদের দিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালান বলে মেয়েটির স্বজনদের অভিযোগ।

শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

সেখানে তিনি বলেছেন, শনিবার সকালে তিনি ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বোরখা পরা চার নারী তাকে মামলা তুলে নিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

জবানবন্দিতে নুসরাত বলেন, বোরখায় মুখ ঢাকা থাকায় ওই চারজনের কাওকে তিনি চিনতে পারেননি। তবে এক পর্যায়ে তাদের একজন আরেকজনকে শম্পা নামে ডেকেছে, সেটা তার মনে আছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, জবানবন্দিতে নাম আসা শম্পাকে খুঁজতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপিকে আটক করেছি আমরা। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সঙ্গে পপির সম্পৃক্ততা আছে কিনা এবং এ ঘটনায় জড়িতদের সন্ধান পেতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, শ্লীলতাহানির মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাতে বাধা দিয়েছিলেন পপি। অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধনেও তাকে দেখা যায়।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান যে মামলা করেছেন, সেখানে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় নাম থাকা বাকি সাতজন হলেন- পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সাবেক ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।

এছাড়া ঘটনার সময় ‘হাতমোজা, চশমা ও বোরকা’ পরিহিত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে লাইফসাপোর্টে থাকা নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর কথা ভাবা হলেও চিকিৎসকরা বলেছেন, এখনই তা সম্ভব না।

পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে নুসরাতকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত