সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ আগস্ট, ২০১৫ ১২:৫৮

তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর ২৪ ঘন্টা পরই প্রবীর সিকদারের জামিন

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে (আইসিটি) ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। আজ বুধবার তার জামিন মঞ্জুর করেন ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক হামিদুল ইসলাম।

এর আগে মঙ্গলবার সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন একই আদালত।

রিমান্ডে নেওয়ার আগেই বুধবার সকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে জামিনের আবেদন জানান প্রবীর সিকদারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু। এরপর প্রবীর সিকদারকে ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে ফের একই আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে তার জামিন দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় জানান, আমরা মানবিক কারণে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করিনি।

ফেইসবুকে লিখে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে পুলিশ রিমান্ডে পাঠানোর পর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই প্রবীরকে জামিন দিয়েছে ফরিদপুরের আদালত।

এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে এ আদালতই মঙ্গলবার পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে প্রবীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল। এ মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছিল ২২ অগাস্ট।

মামলার বাদী আইনজীবী স্বপন পাল বলছেন, এক দিনেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবীরকে আদালতে হাজির করা হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ (২) ধারায় কোতোয়ালি থানায় ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা এপিপি অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল প্রভির শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

রোববার বিকেলে তিনি ওই মামলা করার পর রাতে প্রবীর সিকদারকে তার রাজধানীর ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই মামলায় প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতার দেখানো হয়।


প্রবীর সিকদারের পক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু জামিনের কপি নিয়ে জেলগেটে গিয়েছেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর এই সাংবাদিক কারাগার থেকে বের হয়ে আসবেন। ফরিদপুরের আইনজীবী মাসুদ রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রবীর সিকদারের ছেলে সুপ্রিয় সিকদার অভিযোগ করেছেন- স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে স্বপন পাল নামক এক আইনজীবিকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। মন্ত্রী প্রবীর সিকদারকে অকথ্য ভাষায় গালগালও করেছেন বলে জানান তাঁর ছেলে।

প্রবীর সিকদারের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, রবিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় শেরে বাংলা নগর থানার এসআই জলিলের নেতৃত্বে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে অবস্থিত “উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ” কার্যালয় থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, “প্রবীর সিকদারকে কোনো কারণে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।”

“তিনি তার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন এবং পুলিশ তাকে সহায়তা করছে না এমন একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডেকে আনা হয়েছে। পুলিশ তার কাছে জানতে চাইছে, কী কারণে তার জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।”

তিনি ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের যুদ্ধাপরাধে সম্পৃক্ততা এবং বাচ্চু রাজাকারকে নিয়ে অনেকগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন। লেখালেখির কারণে ২০০১ সালে আক্রমনের শিকার হয়ে তিনি পা হারাতে হয় প্রবীর সিকদারকে।

এছাড়াও তিনি ফরিদপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই (মেয়ের শ্বশুর) এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর দখলের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছিলেন, যে অভিযোগটি প্রথমে করেছিল বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ। তাঁর এ লেখালেখির পর মন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন- হিন্দু ঐ পরিবারটি ভারত চলে গেছে।

এর বাইরেও প্রবীর সিকদার সাম্প্রতিক সময়ে এমজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ের নির্যাতন নিপিড়নের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিতও ছিলেন প্রবীর সিকদার। গত ১০ আগস্ট এ নিয়ে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে প্রবীর সিকদার লিখেন- “আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন :
১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি
২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের
৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”

দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার, যার পরিবারের ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।

তখন হামলার পর মামলায় মুসাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন প্রবীর, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত