সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ আগস্ট, ২০১৫ ১৬:৪৪

মুক্তি পেলেন প্রবীর সিকদার, কারাফটকে বিএনপির সংবর্ধনা

রিমান্ডের ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই জামিনে মুক্ত হলেন ফেইসবুকে লিখে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক প্রবীর সিকদার।

পুলিশ বুধবার সকালে সাংবাদিক প্রবীরকে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতে হাজির করলে বিচারক হামিদুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন। এ মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর।

আদালত জামিন দেওয়ার পর প্রবীর সিকদারকে নেওয়া হয় ফরিদপুর জেলা কারাগারে। বেলা পৌনে ২টার দিকে জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এই সাংবাদিক।

বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের এ সময় কারা ফটকে ফুলের মালা হাতে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

কারামুক্তির পর প্রবীর সিকদার বলেন, “আমি এখন আগে বাড়ি (কানাইপুর) যাব। পরে ঢাকায় ফিরব।”

এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই আদালত মঙ্গলবার পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে প্রবীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল। মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছিল ২২ অগাস্ট।

মামলার বাদী আইনজীবী স্বপন পাল বলছেন, এক দিনেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবীরকে আদালতে হাজির করা হয়।

প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু বলেন, “পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় বিচারক তাকে জামিন দিয়েছেন।”

জিজ্ঞাসাবাদে প্রবীর সিকদার ‘ভুল স্বীকার করায়’ বাদীপক্ষ তার জামিন আবেদনে বিরোধিতা করেনি বলে দাবি করেন বাদীর আইনজীব জাহিদ ব্যাপারী।

প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদারও আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জামিনের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ফেইসবুকে লেখালেখি করে হুমকি পেয়ে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীর সিকদার।

কিন্তু পুলিশ জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা বলেন এই সাংবাদিক।

‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”

এই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রোববার রাতে ফরিদপুর সদর থানায় মামলা করেন আইনজীবী স্বপন পাল। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই মামলা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই মন্ত্রী মোশাররফ ফরিদপুরের সংসদ সদস্য। মামলার বাদী স্বপন পাল ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা।

মামলা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ঢাকার ফার্মগেইট থেকে প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই রাতেই তাকে ফরিদপুরে নিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মঙ্গলবারে একই আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

ফরিদপুরের সন্তান প্রবীরের পক্ষে প্রথম দিন আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও মঙ্গলবার রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু।

প্রবীর সিকদার আগে কাজ করেছেন সমকাল ও কালের কণ্ঠের মফস্বল বিভাগে। দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধির দায়িত্বপালনকালে ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকে তিনি পঙ্গু জীবন যাপন করছেন।

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণেই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করানো হয়েছিল বলে প্রবীরের অভিযোগ।

এই সাংবাদিককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান। দুঃখ প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রতিবাদ জানায় গণজাগরণ মঞ্চ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত