সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ আগস্ট, ২০১৫ ২০:০০

জামিনে মন্ত্রীর সহায়তা বিষয়ক প্রচারকে নাকচ করে দিলেন অনিতা সিকদার

জামিনে এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সহায়তা বিষয়ক মিথ্যাচারকে নাকচ করে দিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার।

এলজিআরডি মন্ত্রী এ জামিনে সহায়তা করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবি ও মন্ত্রীর এমন দাবিকে নাকচ করে দিয়ে অনিতা সিকদার বলেন- আমার ফোন থেকে আমি কাউকে ফোন দেইনি।

জামিনের জন্য সহায়তা চেয়ে ফোন করার পরই এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রবীর সিকদারের জামিনের ব্যবস্থা করেছেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করছিলেন। অনিতার এ বক্তব্যের মাধ্যমে বাদীপক্ষের মিথ্যাচার প্রকাশ পেল।

এ প্রসঙ্গে অনিতা সিকদার বলেন- ‘বুধবার সকালে কেউ একজন আমাকে একটি ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলেন, কথা বলেন। ফোনের এই পাশ বা ওই পাশ কোনো দিক থেকেই কারো পরিচয় দেয়া হয়নি। ওই পাশে এলজিআরডি মন্ত্রী ছিলেন কিনা তাও আমি নিশ্চিত নই’।

‘গত তিনদিনে যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবাইকে যেমন ধন্যবাদ জানিয়েছি, এই ফোনেও আমি সেভাবেই বলেছি, আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। দোয়া করবেন। আর কোনো কথা হয়নি,’ এভাবেই ফোন নিয়ে কিতর্কে তার অবস্থান পরিস্কার করেন অনিতা সিকদার।

অনিতা সিকদার বলেন, ‘মন্ত্রীর কাছ থেকে আমি কোনো ফোন পাইনি। আমিও আমার ফোন থেকে তাকে ফোন দেইনি। আর আমি নিশ্চিত নই অন্য একজনের ফোনে যিনি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি এলজিআরডি মন্ত্রী কিনা।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায়ের ভাষ্য, প্রবীর সিকদারের স্ত্রী স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রবীর সিকদারের জামিনের বিরোধিতা না করতে মন্ত্রী আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।

মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রবীর সিকদার শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাঁর স্ত্রী আমাকে বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার অনুরোধ করেছিলেন। এ কারণে আমি আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়েছি, প্রবীরের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে মানবিক কারণে তার যেন বিরোধিতা না করা হয়।

উল্লেখ্য, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে ফরিদপুরে জনৈক স্বপন কুমার পালকে দিয়ে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি মামলা করিয়েছেন বিষয়টি অস্বীকার করলেও তার মানহানি হয়েছেও বলে দাবি করেছিলেন।

মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এ মামলার কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে অনলাইন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

অনলাইনে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখে মন্ত্রী পিছু হটতে বাধ্য হন বলে জামিন পরবর্তী ফেসবুক স্ট্যাটাসে অনেককেই মন্তব্য করতে দেখা যায়।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে গত রবিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রবীর সিকদারকে তাঁর রাজধানীর ইন্দিরা রোডের অনলাইন পত্রিকা অফিস থেকে আটক করে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তাঁর নামে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা হয়।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় গ্রেপ্তার করে সোমবার ভোরে তাঁকে ফরিদপুরে নিয়ে আসা হয়। সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ।

ওই আদালত তাঁকে ফরিদপুর জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। গতকাল আদালত প্রবীর সিকদারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী জেলা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি স্বপন পাল। মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, প্রবীর সিকদার গত ১০ আগস্ট তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যার শিরোনাম ছিল ‘আমার জীবনের শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’। শিরোনামের নিচে তাঁর মৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী থাকবেন—এমন তিনজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে এক নম্বরে আছেন এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম।

স্ট্যাটাসটি পড়ে বাদীর দৃঢ়বিশ্বাস হয়েছে, প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে অসত্য লেখা লিখে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে উসকানি প্রদান করে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মন্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে। যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রবীর সিকদারের বাবাসহ তাঁর পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করে। ২০০১ সালে জনকণ্ঠ পত্রিকার ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার পর সন্ত্রাসীদের হামলায় তাঁকে একটি পা হারাতে হয়।

এরপর থেকে তিনি কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক বাংলা ৭১, উত্তরাধিকার-৭১ নিউজ অনলাইন পত্রিকা ও উত্তরাধিকার নামের এক ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত