নিউজ ডেস্ক

২০ আগস্ট, ২০১৫ ১১:৪২

নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি ম্যাজিস্ট্রেটের বাসার শিশু গৃহকর্মীটিও

সমাজে শিশু নির্যাতনের ভয়াল চিত্র চিত্র একে-একে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। প্রবাসী, ব্যবসায়ী, মহাজন কিংবা সাদারন মানুষের হাত উঠছে অবুঝ শিশুদের ওপর। শুধু পেটানোই নয় কখনো শিশুকে হত্যা করে  খুনিরা করছে নারকীয় উল্লাস।
 
আমজনতার পর এবার সাতক্ষীরা জেলার খোদ ম্যাজিস্ট্রেটের বাসায় এক শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
 
জানা যায়, গৃহকর্মী মেয়েটির নাম বিথী। বয়স মাত্র ১০। দরিদ্র পরিবোরের বিথী কাজ করে সাতক্ষীরার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের বাড়িতে। শহরের টাউনবাজার ব্রিজের বিপরীতে পলাশপোল মহল্লার মো. আকরাম হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি।
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে এই বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বিথী বারবার, 'পানি দাও, পানি খাবো' বলে আকুতি জানাচ্ছিলো। প্রতিবেশিদের তা দেখে মায়া হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে কেউ তাকে পানি দেয়নি। এই অবস্থায় প্রতিবেশিরা বাড়িটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউ সাড়া না দেওয়ায় পুলিশকে ডাকা হয়। পুলিশও দেড় ঘন্টা ধরে বারবার ডেকে খুলতে পারেনি সেই বাড়ির জানালা দরজা।
 
অবশেষে খবর পেয়ে ছুটে আসেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলাম, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নম্বর-১ শিমুল কুমার বিশ্বাস, সাতক্ষীরা সদর এএসপি সার্কেল আনোয়ার সাঈদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর ঘরের দরজা খুলে দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় বিথীকে।
 
তার গায়ে পোড়া, ছ্যাকা এবং আঘাতের ৩০টিরও বেশী চিহ্ন রয়েছে। শিশু বিথী তখন ভয়ে কাঁপছে। আঘাতের চিহ্নগুলোকে বলেছে মশার কামড়। এমনকি দগদগে ক্ষতচিহ্নগুলো দেখাতেও চায়নি সে। বিথী এখন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি।
 
প্রতিবেশিরা জানান, মেয়েটির আকুতির খবর প্রথমে সদর থানায় দেওয়া হয়। এর পরপরই সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ পুলিশ নিয়ে সেখানে আসেন।
 
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার বড় আমিয়ান গ্রামে বিথীর বাড়ি। তার মা মারা গেছেন। বাবা একাধিক বিয়ে করেছেন। বিথী জানায়, তার চাচা চিফ জুডিশিয়াল আদালতের কর্মচারী সোহরাব হোসেন তাকে ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের বাড়িতে দেন। বিথী আরও জানায়, কেউ তাকে নির্যাতন করেনি। শরীরের ক্ষতগুলো প্রসঙ্গে সে বলে, এগুলি মশার কামড়ের দাগ।  কেউ তাকে মারধর করেনি।
 
পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম ও নারী নেত্রী নাসরিন খান লিপির অনুরোধে সে ক্ষতচিহ্নগুলো দেখায়। মেয়েটির মাথার চুল কাটা দেখা যায়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা, পুলিশের উর্ধ্বত কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা তা দেখেন।
 
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলাম এ সময় বলেন, বিথীর দেহে কিসের দাগ তা তার কাছে জিজ্ঞাসা করুন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্ন এড়িয়ে যান। এ সময় তার স্ত্রী নাতাশা একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন।
 
সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেন, 'নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়েটিকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।'
 
সাতক্ষীরার সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার সাঈদ এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেন,  'বিথীর দেহে অনেকগুলো ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। ডাক্তারদের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত করে বলা যাবে।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত