নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০

আজ জন্মাষ্টমী

সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার।

সনাতন ধর্মমতে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীভগবদগীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।

ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন।

শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে।

দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় আজ সোমবার উদযাপন করা হচ্ছে মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন। এছাড়া বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সকাল এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।

শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে এবং বেতার-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

এছাড়াও সিলেটে সার্বজনীন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) উৎসবের প্রথম দিন। প্রথম দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সিলেট নগরীর মণিপুরী রাজবাড়ীস্থ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দির ও আশ্রমে সকাল সাড়ে ৮টায় সমবেত উপাসনা, সকাল ১০টায় সমবেত গীতাপাঠ, বেলা ২টায় শিশু-কিশোরদের গীতাপাঠ প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় শিশু-কিশোরদের একক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিকেল সাড়ে ৫টায় শিশু-কিশোরদের একক কীর্তন  প্রতিযোগিতা, রাত ৮টায় লোকনাথ ভক্তবৃন্দ পরিষদের সমবেত প্রার্থনা।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় নগরীর মণিপুরী রাজবাড়ীস্থ শ্রীশ্রী মহাপ্রভু জীউর মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিকৃতিসহ নগর পরিক্রমা। বেলা সাড়ে ১১টায় ধর্মসভা। এবারের বিষয়- ‘সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।’ বেলা ২টায় মহাপ্রসাদ বিতরণ, রাত সাড়ে ৮টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ১০টায় শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ পূজানুষ্ঠান, পূজা শেষে সমবেত অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণ, রাত ১২টা ১ মিনিটে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব স্মরণে প্রতি হিন্দুগৃহে ও দেবালয়ে উলুধ্বনি এবং শঙ্খধ্বনি।

এদিকে মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৫তম জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সিলেট মন্দিরে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৩ আগস্ট (শুক্রবার) সকাল ৯ টায় জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় জন্মাষ্টমীর শুভ অধিবাস।

ইসকন সিলেট মন্দির সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) শোভাযাত্রাটি নগরীর কাজলশাহস্থ ইসকন মন্দির থেকে বের হয়ে রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-নাইওরপুল -বন্দর-তালতলা-মির্জাজাঙ্গাল-রিকাবীবাজার হয়ে আবার ইসকন মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে।

পরদিন শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত কীর্তন মেলা, সন্ধ্যা ৭ টায় শ্রী শ্রী গৌরসুন্দরের আরতি, রাত সাড়ে ৭ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ১০ টায় মহা অভিষেক অনুষ্ঠান, ও রাত সাড়ে ১২ টায় অনুকল্প প্রসাদ বিতরণ।

শেষদিন রোববার (২৫ আগস্ট) নন্দোৎসব ও ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল প্রভুপাদের ১২৩তম শুভ আবির্ভাব তিথি মহোৎসব। এ উপলক্ষে দুপুর পর্যন্ত উপবাস।

এছাড়া বেলা ১১ টায় অভিষেক অনুষ্ঠান, দুপুর ১টায় মহিমা কীর্তন, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে শ্রীল প্রভুপাদের চরণকমলে সহস্র লাল গোলাপ নিবেদন, দুপুর ২ টায় মহাপ্রসাদ বিতরণ, বেলা ৩ টায় অফারিং সেটার পাঠ, সন্ধ্যা ৭ টায় গৌরসুন্দরের আরতি, রাত সাড়ে ৭ টায় শ্রীল প্রভুপাদ কথামৃত, রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে শ্রীল প্রভুপাদের উদ্দেশ্যে ১২৩ পাউন্ড ওজনের কেক নিবেদন, রাত ৯ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত