সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:৪০

‘আসামের এনআরসি আরেকটি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করবে’

আসামে ভারত সরকারের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস বা এনআরসি) বাংলাদেশের জন্য আরেকটি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান।  

শনিবার (৩১ আগস্ট) আসামে নতুন নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে হোয়াটস অ্যাপে তারেক শাসসুর রেহমান বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আসামের নাগরিকত্ব থেকে ১৯ লাখ বাংলা ভাষী মানুষকে বাদ দেয়া আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।”

এক্ষেত্রে ফরেন বা বিদেশি ট্রাইবুনালে আবেদনের ব্যবস্থা রাখা হলেও যেসব আদালত তৈরি হচ্ছে সেখানে ইক্যুয়ালিটি বা সমতা বিধান করা হবে কি না সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশীদের ঠেকাতে এনআরসি জরুরি - বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক শাসসুর রেহমান বলেন, ফরেন ট্রাইবুনালের মাধ্যমে যাদেরকে বাদ দেয়া হবে, পরবর্তীতে এসব নাগরিকরা ধীরে ধীরে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট থেকে আরও বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্য আসামের বর্তমান এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কাশ্মীর ইস্যুটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে। তবে আসামের বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের পাশাপাশি আমাদের জন্য এক ধরনের হুমকি।”

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া মানুষগুলো আমাদের দেশে আসার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে বিষয়টিকে আমাদের সমস্যা হিসেবেই দেখতে হবে।

আসামের পর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গেও বাংলাভাষীদের নাগরিকত্ব যাচাই নিয়ে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “ভারতের অর্থনৈতিক মন্দার বদনাম ঘুচাতে বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। দেশের বুদ্ধিজীবী ও বিরোধী দলগুলো যেন অর্থনৈতিক সমস্যা ভুলে এসব বিষয়ে সরব থাকেন সেটাই চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। ফলে আসামের পর পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিকত্ব যাচাই হতে পারে। এটি হলে বড় বিপদ বাংলাদেশের জন্য”।

প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম। শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে প্রকাশিত তালিকায় চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষ। সকাল ১০টায় অনলাইনে তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের পর ১৯ লাখ মানুষকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলেছে, যাদের নাম চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় স্থান পায়নি, তাঁদের সব আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি ঘোষণা করা যাবে না। এনআরসির বাইরে থাকা প্রতিটি ব্যক্তি বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন এবং আবেদন করার সময়সীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে, তাদের পক্ষে যুক্তি শোনার জন্য পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এর মধ্যে ১০০টি ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে চালু হয়েছে এবং আরও ২০০টি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই স্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনালের মামলায় কেউ হারলেও তাঁরা উচ্চ আদালত এবং তারপর সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত