সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২২:১৩

বাস চালানোর প্রথমদিনেই কৃষ্ণাকে চাপা দেন মোরশেদ

ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের সেই বাসের চালক মোরশেদকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৭ আগস্ট বাংলামোটরে ফুটপাতে তুলে দেয়া বাসের চাপায় পা হারান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় চৌধুরী। এ মামলার প্রধান আসামী মোরশেদ।

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মোরশেদ পিবিআইকে জানিয়েছেন, ২৭ আগস্ট তিনি ট্রাস্টের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিনই তিনি এ দুর্ঘটনা ঘটান। এর আগে তার ভারি যান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। এমনকি ছিলো না ভারী যান চালানোর লাইনেন্সও।

মোরশেদ জানান, বাংলামোটরে এসে তিনি বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় বাসটি ডানে না নিয়ে বামের ফুটপাতে তুলে দেন। এতে বাসের নিচে চাপা পড়েন কৃষ্ণা রায় চৌধুরী।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশে ও এসপি বশির আহমেদের তত্ত্বাবধায়নে পিবিআই ঢাকা উত্তর বিভাগের পরিদর্শক মো. জুয়েল মিয়া, তরিকুল ইসলাম ও এসআই আলামিন শেখের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছিল। অবশেষে রোববার রাতে মিরপুরের কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আটক করে মোরশেদকে।

এসপি বশির আহমেদ বলেন, যেদিন কৃষ্ণা রায়কে চাপা দেয়া হয় সেদিনই প্রথম বাসের স্টিয়ারিং হাতে রাজপথে নামেন মোরশেদ। এর আগে তিনি প্রাইভেট কার চালাতেন। তার ড্রাইভিং লাইসেন্সও মধ্যম ক্যাটাগরির। তবে মোরশেদ পিবিআইকে লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি হেলপারি করতেন। এরপর তিনি প্রাইভেট কার চালাতেন। তার ভারি যান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না।

পিবিআই'র পরিদর্শক জুয়েল মিয়া বলেন, ২৭ আগস্ট দুর্ঘটনার পরই মোরশেদ দ্রুত বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান। প্রথমে ইব্রাহিম পুরের বাসায় যান। এরপর ব্যাগ গুছিয়ে মোবাইলের সিমকার্ড পরিবর্তন করে চলে যান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের বড় টিয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে। পরে তিনি জানতে পারেন বাসচাপা দেয়ার ঘটনায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তাকে। এরপর থেকে গ্রামে থাকলেও রাতে ঘুমাতেন প্রতিবেশী কারও ঘরে। দিনের বেলা হাঁটাচলার মধ্যেই থাকতেন।

পিবিআই'র এসআই আলআমিন শেখ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মোরশেদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আমরা রোববার ভোরে বড় টিয়াপাড়া গ্রামে পৌঁছাই। আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মোরশেদ উঠে পড়েন বাড়ির শৌচাগারের পাশের একটি নারকেল গাছে। গাছে বসে পর্যবেক্ষণ করেন আমাদের টিমের অবস্থান। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর মোরশেদকে না পেয়ে বড় টিয়াপাড়া গ্রাম ছাড়ে পিবিআই'র টিম। এরপর নেমে গ্রামের বাড়ি থেকে মোরশেদ সোজা চলে আসেন ঢাকায়। বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরির পর রাতে আসেন কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে। মোরশেদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মোরশেদ এ সব কথা স্বীকার করেন।

পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় পা হারানো কৃষ্ণার রায়ের স্বামী রাধে শ্যাম চৌধুরী বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। থানার মামলা নং-৩৭। হাতিরঝিল থানায় বাসটি আটক আছে। ওই মামলায় চালক মোরশেদকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ দিকে মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্সধারী মোরশেদ ট্রাস্টের ৪০ আসনের বাস চালাতে পারেন কি না এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, বিআরটিএ নিয়ম অনুযায়ী সাত টনের বেশি ওজনের যানবাহন ভারি যানবাহন। এ ধরনের যানবাহন চালানোর জন্য চালকের ভারি বা হেভি লাইসেন্স দরকার।

তিনি বলেন, ট্রাস্টের ওই বাস ভারি ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। সাত টনের নিচে মিনিবাস, মাইক্রোবাস হচ্ছে মিডিয়াম ক্যাটাগরির যানবাহন। মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্স নিয়ে ভারি যানবাহন চালানো নিয়ম বহির্ভূত।

খবর: যুগান্তর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত