সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:২৯

বাঁশের তৈরি স্কুল পেল মর্যাদাপূর্ণ আগা খান পুরস্কার

বাংলাদেশের বাঁশের তৈরি স্কুল মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক আগা খান পুরস্কার লাভ করেছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ কানারচর এলাকায় বাঁশের তৈরি এই স্কুলের স্থপতি সাইফ-উল হক।

বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কাজানে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার ২০১৯-এ ভূষিত হয় প্রকল্পটি। আগা খান ডেভোলাপমেন্ট নেটওয়ার্ক তাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে এই তথ্য জানিয়েছে।

বাহরাইন, ফিলিস্তিন, রুশ ফেডারেশন, সেনেগাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫টি স্থাপনার সঙ্গে ১০ লাখ ডলার মূল্যের পুরস্কারটি জিতেছে বাংলাদেশের এই স্থাপনা। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরে এই পুরস্কারটি তুলে দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

মালেকা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত আর্কেডিয়া অ্যাডুকেশন প্রজেক্টের আওতায় নির্মিত স্কুলটি বাঁশ, দড়ি ও ড্রাম দিয়ে তৈরি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী উভচর প্রকৃতির। স্কুলটি এমন এলাকায়, যে এলাকা বছরের কয়েক মাস থাকে পানির নিচে। যখন পানি আসে, তখন স্কুলটি ভেসে থাকে। যখন পানি চলে যায়, তখন তা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে।

প্রায় দেড়শ' ফিট লম্বা ও ৩৫ ফিট প্রশস্ত অবকাঠামোতে রয়েছে শিশুদের লেখাপড়ার সব সুবিধা। পাঠদানের তিনটি কক্ষ ছাড়াও রয়েছে শিশুদের খেলার জায়গা ও টয়লেট। শ্রেণিকক্ষের নামগুলোও বেশ চমকপ্রদ সিন্ধু, বিন্দু ও কণা। এ ছাড়াও রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

সম্পূর্ণ অবকাঠামোটি তৈরি হয়েছে বাঁশ, দড়ি ও ড্রাম দিয়ে। শুষ্ক মৌসুমে স্কুলটি মাটিতে আর বর্ষাকালে পানিতে ভেসে থাকে। স্কুলের টয়লেটের বর্জ্য ফেলার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছে সেপটিক ট্যাংক। এই ট্যাংকও মূল অবকাঠামোর মতো উভচর।

স্কুলের প্রশাসক মো. সালাম মিয়া জানান, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা রাজিয়া আলম নামে এক নারী স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৯ সালে সাভারের নগরকুণ্ডা এলাকায় ভাড়া বাসায় এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। সেখান থেকে ২০১২ সালে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর কদমতলী এলাকার ভাড়া বাসায় স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে হযরতপুরের কানারচরে জমি ক্রয় করে স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় স্থপতি সাইফ-উল হককে।

২০১৬ সালে স্কুল নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এখানে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের শুধু পড়ানো হয় না, বই ও শিক্ষা উপকরণও দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়।

স্থাপত্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে আগা খান অ্যাওয়ার্ড অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। এই পুরস্কার দেয়া শুরু হয় ১৯৭৭ সাল থেকে। প্রতি তিন বছর পর এই সম্মাননা দেয়া হয়। সমকালীন নকশা, সামাজিক গৃহায়ন, সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নসহ অনেক দিকই এতে বিবেচনা করা হয়।

এরআগে ২০১৬ সালে স্থাপত্যবিদ্যার এই পুরস্কার জিতেছিলেন দুই বাংলাদেশ স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ও কাশেফ মাহবুব চৌধুরী।

তারা দু'জন এ পুরস্কার জয় করার আগে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশিদের দ্বারা নির্মিত তিনটি স্থাপনা পেয়েছিল এ পুরস্কার। এগুলো হল জাতীয় সংসদ ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক হাউজিং প্রকল্প ও রুদ্রপুর স্কুল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত