সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:১৩

রিফাত হত্যার ‘নির্দেশদাতা’ সুনাম : রিশান

রিফাত শরীফ হত্যার নির্দেশদাতা বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথ এমনই দাবি আসামি রিশান ফরাজির

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্থানীয় সাংসদপুত্র সুনাম দেবনাথকে আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন আসামি। মামলায় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন আসামি করা হলো এনিয়েও প্রশ্ন করেন তারা।

মঙ্গলবার আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় আসামি রিফাত ফরাজি, তার ভাই রিশান ফরাজিসহ কয়েকজন সুনাম দেবনাথকে এ হত্যাকাণ্ডের ‘নির্দেশদাতা’ বলে দাবি করেন।

তবে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথ বলছেন, তার দুর্নাম রটাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে এই হত্যাকাণ্ডে তার নাম জড়ানো হচ্ছে। গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম।

আদালত চত্বরে আসামিদের ঢোকানো এবং গাড়িতে ওঠানোর সময় রিফাত হত্যার অন্যতম আসামি রিশান ফরাজি চিৎকার করে বলেন, সুনাম দেবনাথ আমাদের লিডার, সুনাম দেবনাথই আমাদের নির্দেশদাতা, সে কেন আসামি হয়নি, তাকে কেন আসামি করা হল না।

এসময় রিশান ফরাজি আরও বলেন, মিন্নি কেন সাত নম্বর আসামি?

রিশান ফরাজি বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে এবং চার্জশিটভুক্ত এক নম্বর আসামি রিফাত ফরাজির ছোট ভাই।

আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং এরপর রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা, সঙ্গে মাদক ব্যবসা জড়িত থাকার অভিযোগ পুরো ঘটনাকে ভিন্ন এক মাত্রা দেয়। অভিযোগ ওঠে যে, বড় কিছু আড়াল করতেই পেছন থেকে ক্ষমতাশালীরা কলকাঠি নাড়ছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, নয়ন বন্ড নামে বরগুনাবাসীর কাছে পরিচিত সেই সাব্বির আহম্মেদ ওই শহরে একটি গ্যাংয়ের নেতা, যাদের মদদ দেন এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ। যদিও এর আগে বিবিসি বাংলার কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে পিতা-পুত্র দু'জনেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির যোগসাজশের ইঙ্গিত সুনাম তার ফেসবুক পোস্টে করেছিলেন। পরে তা সরিয়েও নেন। হত্যা মামলা দায়েরের সময় সাক্ষীর তালিকায় মিন্নির নাম থাকলেও এখন তিনিও একজন আসামি। এদিকে, বরগুনার মাদকচক্রের মদদদাতা হিসেবে সুনামের নাম বলেছিলেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসা সুনাম রিফাত হত্যাকাণ্ডেও জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে কেউ কোথাও আমার সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেছে কি না? যদি সেখানে তারা এসব না বলে থাকে, তবে এখন এমন বক্তব্যের মানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।”

মঙ্গলবার ১৪ আসামিকে সকালে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচার হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেপ্তার ছয় আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের যশোরে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচার। বাকি আসামিদের জেলা কারাগারে নেওয়া হয়। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত