সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:৩৮

তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে অপসারণ

পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ সলিসিটর এসএম নাহিদা নাজমীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করা হলো।’

এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপনে স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের মে মাসে এ ঘটনার জেরে ট্রাইব্যুনালের সব ধরনের মামলা থেকে তুরিন আফরোজকে অব্যাহতি দেন প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

২০১৮ সালে অভিযোগ ওঠার পর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ড. তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক আসামির কাছে মামলার স্পর্শকাতর কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন তিনি।’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে পাঠান। ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার নাম মতিউর রহমান।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১১ নভেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। এর এক সপ্তাহ পর তিনি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাঁকে যেকোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও তিনি কথোপকথনের সময় জানান।

প্রথমে নির্ধারণ হয় ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাঁদের সাক্ষাৎ হবে। এ সময় ড. তুরিন আফরোজ জানান, সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দ্যকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তাঁরা দুজন ওয়াহিদুল হকের বাসায় যাবেন।

পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়। তাঁরা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামের একটি রেস্তোরাঁয় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা প্রায় তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, ‘আপনি যে পদে ছিলেন, তাতে তো ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা।’ এ সময় ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের আদেশের অনুলিপি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুবছর পর পুলিশে যোগ দেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পান। এরপর গত শতকের শেষ দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন।

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫০০ থেকে ৬০০ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে ওয়াহিদুল হকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর হিসেবে ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজকে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেয় সরকার। পরে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করে বেশ সুনাম অর্জন করেন তুরিন আফরোজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত