সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:৫৪

সু চিকে দোষ স্বীকারের আহ্বান জানানোর তালিকায় নেই ড. ইউনূস

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যাসহ সব অপরাধ জনসমক্ষে স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাতজন। তবে এই তালিকায় নেই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিবৃতিদাতা সাত নোবেল বিজয়ী বলছেন, অপরাধকর্মের জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও তার সেনা অধিনায়কদের অবশ্যই ফৌজদারি বিধিতে জবাবদিহি করতে হবে।

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণকারী অং সান সু চিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যাসহ সব অপরাধ জনসমক্ষে স্বীকার করার আহ্বান জানাই।’

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিষয়ে মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের গণহত্যার আচরণ বন্ধে জরুরি পদক্ষেপের নির্দেশ চেয়ে জাতিসংঘের এ আদালতে গত নভেম্বরে মামলা করে গাম্বিয়া। সু চিকে একসময় যারা গৃহবন্দি করে রেখেছিল সেই সামরিক শক্তির পক্ষে বুধবার জাতিসংঘের আদালতে যুক্তি তুলে ধরবেন তিনি।

নোবেল বিজয়ীদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে অপরাধের নিন্দা না করে বরং অং সান সু চি ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে যাচ্ছেন যে এসব অপরাধ এমনকি কখনো ঘটেনি।’

বিবৃতিতে সই করা নোবেল বিজয়ীরা হলেন ইরানের শিরিন এবাদি (২০০৩), লাইবেরিয়ার লেমাহ গবোই (২০১১), ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান (২০১১), উত্তর আয়ারল্যান্ডের মেরেইড ম্যাগুয়ার (১৯৭৬), গুয়াতেমালার রিগোবার্টা মেনচা তুম (১৯৯২), যুক্তরাষ্ট্রের জোডি উইলিয়ামস (১৯৯৭) এবং ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী (২০১৪)।

বিবৃতিতে নোবেল বিজয়ীরা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হওয়া গণহত্যাসহ অপরাধগুলো প্রকাশ্যে স্বীকার করার জন্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে আমরা অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, এই নৃশংসতায় নিন্দা জানানোর পরিবর্তে সেটা অস্বীকার করেছেন সু চি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শান্তির মানুষ হিসেবে আমরা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা, ভূমির মালিকানা, আন্দোলনের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। আমরা সু চিকে নৈতিক দায়িত্ব পালনের এবং তার নজরদারির অধীনে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ও নিন্দা জানাতে অনুরোধ করছি।

গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রতি নৃশংসতার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক আদালতে ৪৬ পৃষ্ঠার এক অভিযোগপত্র দেয় দেশটি। সেখানে তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও উচ্ছেদের অভিযোগ আনে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ওই মামলার ধারাবাহিক শুনানি চলবে। মিয়ানমার ও গাম্বিয়া দুই দেশের প্রতিনিধি দলই এতে অংশ নিচ্ছেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিও আদালতে হাজির হয়েছেন।

বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ঘটনায় মিয়ানমারকে দায়ী করার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা গাম্বিয়ার প্রশংসা করেন ওই সাত নোবেলজয়ী।

এদিকে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিকে গণহত্যার দায় অস্বীকার না করার আহবান সাত নোবেল বিজয়ী জানালেও সেই তালিকায় নেই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সু চি ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণহত্যার কারণে বাংলাদেশের সীমান্তে দুই বছর আগে রোহিঙ্গা ঢল নেমেছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশে দশ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। মানবিক বাংলাদেশ বাস্তুচ্যুত সেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। এবং দুই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত সেই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করেনি মিয়ানমার। মিয়ানমারের এমন ভূমিকা এবং সাত নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিকে রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ সকল অপরাধ অস্বীকার না করার আহবান সত্ত্বেও বাংলাদেশি নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের কোন বিবৃতি না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলছে।

প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক ফজলুল বারী এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, শান্তিতে সাতজন নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা নিধনের পক্ষে সাফাই না গাইতে অং সান সু চির প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ওই সাতজনে বাংলাদেশের ড মোহাম্মদ ইউনুস নেই! কারণ তিনি শান্তশিষ্ট বিশিষ্ট সুদ ব্যবসায়ী।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত