নিউজ ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০৯:৪৮

অবরোধেও ‘চলবে’ এসএসসি পরীক্ষা

বিএনপি অবরোধ চালিয়ে গেলে তার মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ইংগিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।


বিএনপি অবরোধ চালিয়ে গেলে তার মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ইংগিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

এদিকে পরীক্ষা যতো এগিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শঙ্কা ততো বাড়ছে। অবরোধের কারণে প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন পরীক্ষার্থী।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, যাতে ১৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।

শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সোমবার সচিবালয়ে  বলেন, পরীক্ষার সব প্রস্তুতি শেষ। এখন সরকারের প্রত্যাশা, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এসএসসি পরীক্ষার সময় বিএনপি অবরোধ তুলে নেবে।

“তাদের অবরোধের তো কোনো সময়সীমা নেই। তাই আমরা যে পরীক্ষা পিছিয়ে দেব তারও তো কোনো উপায় নেই। যথাসময়েই পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।”

গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। তারই মধ্যে মাঝে মধ্যে হরতাল থাকছে। নাশকতা ও সহিংসতায় সারা দেশে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হলেও যেদিন হরতালের কর্মসূচি থাকবে সেদিনের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে।

একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অবরোধের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, একসঙ্গে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো লোকবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নেই।”

তবে অবরোধের মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

পরীক্ষার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ছয় বছর আগেই নির্ধারিত হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার রুটিন দেখেও এই সময়ে তারা কেন এসব কর্মসূচি দেন? তাদের কি কাণ্ডজ্ঞান নেই?”

হরতাল-অবরোধ করে বিএনপির কোনো ‘লাভ’ হচ্ছে না মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, “তারা শিক্ষার্থী ও পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এটা কারো কাম্য নয়, এটা হতে দেওয়া যায় না।”

‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা সম্প্রতি অবরোধের আওতামুক্ত ঘোষণা করে বিএনপি। তবে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা অবরোধের আওতামুক্ত রাখা হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কিছু বলেননি দলটির নেতারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষার মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার হবে না এমনটি ধরে নিয়েই পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি হয়েছে।

“তবে আমরা তাকিয়ে আছি, ইংরেজি মাধ্যমের মতো এসএসসি পরীক্ষাও বিএনপি অবরোধের আওতামুক্ত রাখে কিনা।”

তবে পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়ছে।

শিমুল নামে একজন পরীক্ষার্থী বলেন, “শিক্ষকদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন থাকলেও আমাকে বাড়ির বাইরে বের হতে দিচ্ছে না। ঠিক সময়ে পরীক্ষা হবে কি-না তা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে। অবরোধের মধ্যে কীভাবে পরীক্ষা দেব?”

আরেক পরীক্ষার্থী জারিফ মাহদিন বলেন, “আমরা কয়েক বন্ধু একসঙ্গে বসে কী কী পড়ব, কীভাবে পড়ব তা ঠিক করতাম। কিন্তু যে অবস্থা তাতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা আর হচ্ছে না। মোবাইলে কি আর সব কিছুর সমাধান হয়?”

নিজের মেয়ে পরীক্ষা দেবে জানিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রহমান বলেন, “অবরোধের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে আমার স্ত্রী কীভাবে কেন্দ্র যাবে সেই চিন্তা করছি।”

ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংগঠন ‘অভিভাবক ফোরামের’ চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের দুই বড় দলের কাছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা ‘বলির পাঁঠা’ হয়ে গেছে।

“একদল বলছে অবরোধ চলবে। এর মধ্যে সরকার যদি পরীক্ষা নেয় তাহলে তো কারো কিছু করার নেই। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি হলে সেই দায় কে নেবে?”





আপনার মন্তব্য

আলোচিত