নিউজ ডেস্ক

২৯ এপ্রিল, ২০১৫ ২৩:৪৯

ভোট কারচুপির অভিযোগের তদন্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করা হবে বলে বলেও জানান তিনি।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিজয়কে গণতন্ত্রের বিজয় ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে জনরায় বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার (এপ্রিল ২৯) রাতে গণভবনে ঢাকার নবনির্বাচিত দুই মেয়র প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার তিন সিটিতে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট বর্জনের পর তা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন।

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের এই ভোট জালিয়াতির অভিযোগের সপক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।

তাদের আহ্বানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে সমস্যা, ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করব, খতিয়ে দেখব। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আমার হাতে আসবে। কে কত ভোট পেয়েছে তা দেখতে পারব।”
মঙ্গলবার তিন সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কেন্দ্রের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জাল ভোট দেওয়ার দৃশ্য সাংবাদিকদের ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে।

ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভোটে ‘সামান্য’ কিছু ত্রুটি ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৪০-৫০টি ‘ঘটনা’ ঘটেছে।

১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপেরেশন নির্বাচনের পর দিন লালবাগে গুলিবর্ষণে সাতজনের মৃত্যুর ঘটনা, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় ৫৮২টি কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এর সঙ্গে তুলনা করলে, এই নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছে।

“হয়ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। সাতাশশ’ কেন্দ্রের মধ্যে দুটি বন্ধ হয়েছে। ৪০/৫০টি জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। ওই কেন্দ্রগুলোতে কিছুক্ষণ ভোট ছিল, তারপর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।”
আগামীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া উচিত।”

প্রধানমন্ত্রী বিজয়ী হওয়ার জন্য ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে অভিনন্দন জানান। এ সময় দুই মেয়রের পরিবারের সদস্যরাসহ আওয়ামী লীগের র্শীষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন শুরুর মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরই নির্বাচন বর্জন করে ফেললো। উত্তরে তাবিথ আউয়াল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছে, মির্জা আব্বাস পেয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট। নির্বাচনে যদি কারচুপি হয় তবে এত অল্প সময়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এতো ভোট পেলে কিভাবে? কারচুপি হয়েছে বলে যারা পত্রিকায় বড় বড় হেড লাইন দিয়েছে তাদেরও এর জবাব দিতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণে ৪৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, উত্তরে ৩৭ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এতো কম ভোট কাস্ট হয়েছে। তাহলে কারচুপি হলো কিভাবে?

এ সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে কারচুপির ক্ষেত্রে বিএনপির অতীত ইতিহাস তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে যারা মানুষ পুড়িয়েছে জনগণ তাদের ভোট দিবে কি করে। কোনো বিবেকবান মানুষ তাদের ভোট দিবে না। তারপরও তারা ভোট পেয়েছে। মির্জা আব্বাস পেট্রোলবোমা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাবিথের বাবা টাকা দিয়েছে। তারপরও তারা অনেক ভোট পেয়েছে।

নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপির কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বর্জন করার মতো কোনো কারণ ছিলো না। আসলে তাদের নির্বাচন বর্জনটা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত।

তিনি বলেন, নির্বাচন কারচুপির যে অভিযোগ দিয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গেলো, কিন্তু কোন কেন্দ্রে কারচুপি হয়েছে তারা সেটা বলতে পারেনি। তারা কোনো একটা জায়গা দেখাতে পারেনি, ওমুক জায়গায় নির্বাচনের কারচুপি হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অনুষ্ঠানে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান তিনি।

এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে পরে সংবর্ধনা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত