নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ১৩:০১

তারেকের নাগরিকত্ব: প্রতিমন্ত্রী বলছেন ‘ছেড়েছেন’, বিএনপির ‘না’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ‘ছেড়ে দিয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এদিকে, তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিষয়ে বিএনপি বলছে, ‘জিয়া পরিবার এ দেশের নাগরিক আছেন, এ দেশের নাগরিক থাকবেন’।

দীর্ঘদিন থেকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘লন্ডনে হাইকমিশনে নিজের পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন’।

গত শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় এতথ্য জানান শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে তারেক জিয়া তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছে। সে কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়?’

এদিকে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘যতই কাহিনী বানানো হোক, জিয়া পরিবারের রক্ত ও মাটি হচ্ছে এ দেশে। তারা এ দেশের নাগরিক আছেন, এ দেশের নাগরিক থাকবেন’।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন না থাকায় তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে হচ্ছে। যেদিন বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র আসবে, সেদিন তারেক রহমান বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরে আসবেন’।

তারেকের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার তথ্যের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এটা আত্মা বিক্রির সমতুল্য। পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারাই, যাদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশিদের বিয়ে করে বিদেশেই নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন’।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘তারেক রহমানের পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে উড়ো ও অবান্তর কথা বলেছেন, তার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

এরআগে গত মঙ্গলবার লন্ডনে ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটে (ওডিআই) ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন গল্প : নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দুই মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি তারেক রহমানের মতো একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারেরও সমালোচনা করেন।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘এ ব্যাপারে আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলছি এবং অবশ্যই একদিন আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনব। তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে’।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর রোববার ঢাকায় ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনতে ওই দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে’।

আইনমন্ত্রী জানান, ‘বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও এই চুক্তি করতে তো বাধা নেই। তা ছাড়া মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাক্ট বলে একটি আইন আছে। এই আইনের আলোকে কিছু অপরাধীকে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আনতে পারি। সেই মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাক্ট আমাদের দুই দেশেরই আছে’।

উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের আদালত থেকে ইতোমধ্যেই দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত।

২০১৬ সালের ২১ জুলাই মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি তাকে ২০ কোটি টাকাও জরিমানা করা হয়। ওই মামলায় বিচারিক আদালত থেকে খালাস পেয়েছিলেন তারেক।

এবছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানসহ আর ৫ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়। পাশাপাশি তারেক সহ অন্যদের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মামলা রয়েছে। শেখ হাসিনার প্রাণনাশের উদ্দেশে পরিচালিত ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত