বিবিসি বাংলা

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১১:৪৪

ছোট দলের বড় শর্ত

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে সাধারণত ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় কোন দল বা জোটের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায়। তবে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিজেরাই আলাদা একটি জোট গঠন করে সেখানে বড় দলগুলোকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

জাতীয় ঐক্য নামে তাদের এই জোটে যোগ দিতে সংসদের অর্ধেক আসন ছোট দলগুলোকে ছেড়ে দেয়ার কথাও বলা হচ্ছে নতুন ঐ জোট থেকে। কিন্তু ছোট দলগুলো থেকে কেন এরকম উদ্যোগ নেয়া হলো? আর রাজনীতিতে এসব দলের গুরুত্বই বা কতটা?

বিকল্প ধারা, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এবং গণফোরাম -সম্প্রতি ছোট ছোট এই ৪টি দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্য নামে আলাদা একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা নিয়ে এখন চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা।

জোটের নেতারা বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে এই জোটে যুক্ত হতে বড় দলগুলোকেও আহ্বান জানাচ্ছেন।

এই ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল উদ্যোক্তা বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলছেন, তাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট কোন দলের জন্য নয়। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যে কোন দলই এতে অংশ নিতে পারবে। তবে তার আগে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন "আমরা রাজনীতিতে ও দেশ শাসনে একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনের পর কোন একক দলের কাছে যেন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়। নির্বাচনের আগেই যদি আমরা সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছাতে না পারি তাহলে তো বড় কোন দলের সঙ্গে জোট করে কোন লাভ নেই। নির্বাচনের পর সেই বড় দল জয়ী হলে তারা স্বেচ্ছাচারিভাবেই দেশ পরিচালনা করবে।''

তিনি জানান, তাদের এই জোট এখনো বড় কোন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তাদের দেয়া শর্তগুলো মানলেই কেবল সেটা সম্ভব হবে, কিন্তু সেসব শর্ত কী?

"প্রথমত: আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে দলের সঙ্গেই জোট হোক, তাদেরকে সংসদের অর্ধেক আসন ছেড়ে দিতে হবে ছোট দলগুলোর জন্য। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও শরীকদের সুযোগ দিতে হবে। দুর্নীতি বন্ধের অঙ্গিকার করতে হবে। এসব কথা আমরা এখন সবখানেই বলে আসছি।''

কিন্তু এসব শর্ত, বিশেষ করে সিট বন্টনের মতো কঠিন শর্ত বড় দলগুলোর কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, "সিট বন্টনের মতো শর্ত বড় কোন দলই মানবে না। বিএনপি এ জোটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু অর্ধেক আসন শরীক ছোট দলগুলোকে ছেড়ে দেয়ার শর্ত মেনে সেটা সম্ভব বলে মনে হয় না।''

অবশ্য বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানিয়েছেন, তারা বিএনপি'র কাছে ইতোমধ্যে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছেন। কিন্তু বিএনপি থেকে এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

এদিকে ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা আরেক দল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের বাইরে তৃতীয় একটি জোট হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি আছে তাদের।

তিনি বলেন, "আমরা কখনোই এমন কোন দলের সঙ্গে জোট করবো না, যারা মনে করে যে আমরা নিজেদের মতো করে দেশ চালাবো, আমরা দুর্নীতি করলে তোমরা নিরব থাকবে। সেরকমটা হলে তারা আমাদেরকে সঙ্গে পাবে না।''

ড. কামাল জানিয়েছেন, সংসদ, রাজনীতি এবং দেশের শাসন পদ্ধতি নিয়ে তাদের যে বক্তব্য সেগুলো তারা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব নিয়ে কতটা কী ভাবছেন?

রাজধানীর শাহবাগে কথা হচ্ছিলো আব্দুল আলিম নামে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, '' ছোট দলগুলো যেসব কথা বলছে, এগুলো সবই ভালো কথা। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের জন্য তো তাদের ক্ষমতায় আসতে হবে? তাদের কী সেরকম জনপ্রিয়তা আছে?''

মৌসুমী নামে আরেকজন কর্মজীবী নারী বলছিলেন, '' ছোট দলগুলো চাচ্ছে নতুন কিছু করতে। এজন্য তাদের সবার আগে জনগনের কাছে আসা উচিত। তাদের ইশতেহার বা পরিকল্পনাআমাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। সেটা তো হচ্ছে না।''

ছোট দলগুলো বলছে, তাদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে শিগগিরই তারা রাজনীতির মাঠে নামবেন। আলোচনা চলবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে ছোট দলগুলোর এই জোট আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলছেন, "এই ছোট দলগুলোর বড় কোন ভোট ব্যাংক নেই এটা সত্য। কিন্তু দলগুলোর যে মূল নেতারা আছেন, তাদের সম্পর্কে মানুষের একটা ভালো ধারণা আছে। এখন তারা যদি বড় কোন দলের সঙ্গে জোট করতে পারেন, তাহলে নি:সন্দেহে তারা বাড়তি কিছু ভোট টানতে পারবেন।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত