নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:৪২

স্থগিত, বিলুপ্ত আর বহিস্কারে বন্দি সিলেট ছাত্রলীগ

সিলেটে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ক্ষমতাসীন দলের এ ছাত্রসংগঠনের

সিলেট ছাত্রলীগের শনির দশা যেন কিছুতেই কাটছে না। বিতর্ক পিছি ছাড়ছে না সিলেটে ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্রসংগঠনের। এতোদিন বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলো সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। এবার মহানগর ছাত্রলীগ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা অভিযোগ। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রোববার সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা কেন্দ্রীয় কমিটি। স্থায়ী বহিস্কার করা হয় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারকে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই সিলেটে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। একের পর এক সংঘাত, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠন। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। গত ৭ বছরে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৮ ছাত্রলীগ নেতা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর সিলেট নগরীর টিলাগড়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ওমর ফারুক মিয়াদ। এ খুনের ঘটনায় তার বাবা আকুল মিয়া বাদী হয়ে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এর পর ১৮ অক্টোবর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে একবছরের বেশি সময় ধরে কমিটিহীন আছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ।

২০১০ সালে সিলেট সরকারি কলেজে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এরপর ২০১২ সালে ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এঘটনায় ছাত্রলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে এখনও বিচার চলছে।

এঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও ক্ষান্ত হয়নি সিলেট ছাত্রলীগ। এরপরও একের পর এক বিতর্কে জড়াতে থাকেন সংগঠনের সদস্যরা।

২০১৩ সালের গত ২২ জানুয়ারি এমসি কলেজে শিক্ষা অধিদফতরের প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সেসময় সিলেট জেলা সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় পঙ্কজ পুরকায়স্থকে। এরপর এমসি কলেজে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি ও ভাঙচুর করে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিস্কার করা হয় পঙ্কজ পুরকায়স্থকে।

পঙ্কজের বহিস্কারের পর জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন সিনিয়র সহ-সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু। বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাঁরও।

একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সিপিবির সমাবেশে দলটির সভাপতি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ওপর হামলা চালানো হয়। নিপুর নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র।

এ ঘটনার প্রায় এক বছর পর ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শাহরিয়ার সামাদকে সভাপতি ও এম রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ সদস্যের নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর আরও ১৩১ সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্র থেকে ১৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে এই কমিটিও। টিলাগড় এলাকায় সংঘর্ষের জেরে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মিয়াদ হত্যার ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

ওই বছরের ২৫ অক্টোবরের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের কাছ থেকে জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা। তবে এখন পর্যন্তও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এনিয়ে সিলেট ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ অবস্থায় রোববার বিলুপ্ত করা হলো মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হলো সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারকে। ফলে বর্তমানে সিলেট ছাত্রলীগের জেলা ও মহানগর উভয় শাখাই নেতৃত্বহীন।

এরআগে ২০১৪ সালে মহানগর ছাত্রলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক থাকাকালেও আবদুল আলীম তুষারকে বহিষ্কার করে মহানগর ছাত্রলীগ। যদিও এ বহিষ্কারকে মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এখতিয়ার বহির্ভূত দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।

২০১৫ সালের ২০ জুলাই আব্দুল বাসিত রুম্মানকে সভাপতি ও আব্দুল আলীম তুষারকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছি। এরপর প্রায় সাড়ে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি তারা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, ‘সংগঠনের নীতি আদর্শ পরিপন্থী নৈতিকস্খলনজনিত গুরুতর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আব্দুল আলীম তুষারকে স্থায়ী বহিস্কার করা হলো এবং মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, সংগঠনের নীতি আদর্শ পরিপন্থি কোনো কাজকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।

তিনি বলেন, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের জন্য আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে পদপ্রত্যাশী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়েছে। দ্রুতই সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত