সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ নভেম্বর, ২০১৮ ১৯:১০

যে চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

পদত্যাগের নির্দেশ পাওয়া এই চার মন্ত্রী হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি।

মন্ত্রিসভায় সর্বশেষ রদবদলের পর এতদিন ৩০ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে এই চারজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য না হয়েও টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যারা নির্বাচিত সংসদ সদস্য নন এবং সরকারের বিশেষ বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেয়েছিলেন তারাই হলেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী।

জানা যায়, এখন এই চার মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এরপর পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাবে। সেখান থেকে আবার যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তার কার্যালয় থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। পরে মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

মতিউর রহমান:
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সনে মেট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সনে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৬৪ সনে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ সময় তিনি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মনোহরদি হাতিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বি.এস.সি. শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৬ সনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ সনে এম.এস.সি. সম্পন্ন করেন। এম.এস.সি. পাসের পর তিনি জামালপুর জেলার নান্দিনা কলেজ এবং ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন।

মতিউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। ১২ জানুয়ারি তারিখে মতিউর রহমান বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

নূরুল ইসলাম বিএসসি:
নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে চান্দগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিএসসি চট্টগ্রাম এনএমসি মডেল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি এবং বিএসসি পাস করেন।

শিক্ষানুরাগী হিসেবে নুরুল ইসলাম বিএসসি এ পর্যন্ত প্রায় ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশ সমাজ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকার জন্য তাকে ২০০২ সালে জাতিসংঘ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। ২০১১ সালে শিক্ষায় অবদানের জন্য তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন।

নুরুল ইসলাম বিএসসি স্কুল জীবন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগে যোগদান করেন। এর পর আওয়ামী লীগ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আজ পর্যন্ত একই সংগঠনে আছেন। তিনি বিগত ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন হতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে গত ১৪ জুলাই তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

ইয়াফেস ওসমান:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ১৯৪৬ সালের ১ মে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি ১৯৭০ সালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরে। তিনি বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।

পেশাগত জীবনে স্থাপত্য ও নকশা প্রতিষ্ঠান ‘প্রকল্প উপদেষ্টা লিমিটেড’- এর মহাব্যবস্থাপক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন ইয়াফেস ওসমান।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

মোস্তাফা জব্বার:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রীপ্রাপ্ত মোস্তাফা জব্বারের পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে। ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের নানার বাড়িতে জন্ম মোস্তাফা জব্বারের। ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ১৯৭২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালের পরীক্ষা ১৯৭৪ সালে সম্পন্ন করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন।

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে মোস্তাফা জব্বার ১৯৮৭ সাল থেকেই নিরলসভাবে কাজ করছেন। তারই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে কম্পিউটার আমদানির ওপর শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার হয়। তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা, সম্প্রচার নীতিমালা, অনলাইন নীতিমালা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সম্প্রচার আইন ও কপিরাইট আইনসহ ডিজিটাল আইন কাঠামো তৈরিতে তিনি ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মোস্তাফা জব্বার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র থাকাকালেই মোস্তাফা জব্বারের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। ১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল মেকিন্টোস কম্পিউটারের বোতাম স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে কম্পিউটার ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন। সেই বছরের ১৬ মে তিনি কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি প্রকাশ করেন বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত