হোসাইন ইমরান, শাবি

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:৩৯

ছন্নছাড়া শাবি ছাত্রলীগ, তৎপর হচ্ছে ছাত্রদল-শিবির

দীর্ঘ পাঁচ বছরেও নতুন নেতৃত্ব না আসায় রাজনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে। বছরের পর বছর রাজনীতি করে পদবঞ্চিত থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমতাবস্থায় সামনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভূমিকা কেমন হবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নেতাকর্মীদের মনে।

ছাত্রলীগের এই ভাঙনকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে কাজে লাগাতে চাচ্ছে ছাত্রদল ও শিবির নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকায় যাতায়াত বাড়ছে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রন নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল শিবির-ছাত্রদল।

কেন্দ্রীয় নেতাদের আশার বাণী শুনে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার পরও শেষ পর্যন্ত নেতৃত্বে আসতে না পারায় রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। কর্মীদের রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ার কারণে অনেকটা খুঁড়িয়েই চলছে শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। কেউ কেউ নিজ গ্রুপের নেতার মন রক্ষার্থে নিতান্ত বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে অংশগ্রহণ করছেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে।

ধারণা করা হচ্ছে অতীতের মতো এবারও তারা ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রন নিতে চাইবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য সৃষ্ট সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাথায়।  

২০১৩ সালের ৮মে সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থকে সভাপতি করে এবং ইমরান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ ৭ সদস্য বিশিষ্ট এক বছর মেয়াদী কমিটি হয়েছিল শাখা ছাত্রলীগের। এই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৮মে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট করে পূর্ণাঙ্গ করা হয়।

২০১৭ সালের এপ্রিলে যৌন হয়রানি ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থকে অব্যাহতি দিলে সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে যারা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন, তাদের সকলেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে।

২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর নতুন নেতৃত্বের খোঁজে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সম্মেলনের ঘোষণা দিলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সেই সম্মেলন সফল হয়নি। সম্মেলনের পরিবর্তে এই তারিখে কর্মীসভার আয়োজন করলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নেতৃত্বে না আসতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদ প্রত্যাশী কর্মীরা।

এসময় তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু বলেছিলেন, শীগ্রই নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কমিটি না আসায় হতাশ হয়ে পড়ছেন দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করে আসা শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গোলাম রব্বানী আসার পর সিলেট সফরে এসে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শাবির নতুন কমিটি দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি।

চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন সঙ্কট সৃষ্টি হলে শাখা ছাত্রলীগ তা কতটা মোকাবেলা করতে পারবে সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। কর্মীরা রাজনীতি বিমুখ হয়ে যাওয়ায় একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্ইে সুযোগ লুফে নিবে শিবির-ছাত্রদল।

ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকায় শিবির-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের যাতায়াত বাড়ছে। ক্যাম্পাসে তাদের পূর্ণ আধিপত্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে যেকোন সময় মাথাছাড়া দিয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগের ত্যাগী  কর্মীদের নেতৃত্বে নিয়ে আসলে এই সঙ্কট কাটানো সম্ভব হত বলে মনে করছেন শাখা ছাত্রলীগের অনেকেই।

শাখা ছাত্রলীগের সদস্য মনকীর কাজী বলেন, দীর্ঘ পাঁচ/ছয় বছর হয়ে গেল কমিটি আসছে না। সাংগঠনিক কোন কর্মসূচিই ভালোভাবে হয় না। সামনে নির্বাচনে শিবির-ছাত্রদলের মোকাবেলা ছাত্রলীগ কীভাবে করবে এখন সেটাই দেখার বিষয়।

শাখা ছাত্রলীগের কর্মী মামুন শাহ বলেন, নতুন নেতৃত্ব আসলে নেতা-কর্মীরা আরও সক্রিয় থাকত। তবে এখনও আমরা শিবির-ছাত্রদলের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত আছি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের কমিটির ব্যাপারে অবগত আছেন। তারা চাইলে যেকোন সময় নতুন কমিটি দিতে পারেন। সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগ সবসময় সজাগ আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত