নিউজ ডেস্ক

২৫ জুলাই, ২০১৫ ১৫:৩৩

ছাত্রলীগের প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শান্তিপূর্ণ রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

অস্ত্রের ঝনঝনানির বদলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন শান্তিপূর্ণ থাকে সে ব্যাপারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের মূলনীতি শিক্ষা,শান্তি ও প্রগতি। এর থেকে ভালো কোনো নীতি হতে পারে না।

তিনি বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তাই শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দেই। ছাত্রলীগকে মনে রাখতে, আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম লেখা-পড়া করার জন্য। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তাদেরই নির্বাচিত করতে হবে যারা নিয়মিত ছাত্র। 

তিনি বলেন, ‘আমরা আগে প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখেছি। একযোগে সারাদেশে বোমাবাজিও দেখেছি। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনতে। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকে।

সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে দু’দিনব্যাপী (শনি ও রোববার) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

বাঙ্গালির সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতায় ছাত্রলীগের ভূমিকা অগ্রগণ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীকে বলবো, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রত্যেককে পড়তে হবে। তাহলেই জানা যাবে একজন মানুষ আদর্শের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে।

নিজের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন ও সাজা কার্যকরের বিষয়ে আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার শক্তি সততার শক্তি। একমাত্র সততার জোরেই তিনি তার অারাধ্য কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার প্রতিজ্ঞা ছিলো একদিন না একদিন তিনি বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করবেন। তার সে প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে। তবে এজন্য তাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করেছেন। এসব কাজে তার মূল শক্তি ছিলো সততার শক্তি। 

শুধুমাত্র সততার শক্তির জোরেই তিনি এসব গুরুদায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। এ জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গড্ডালিকায় গা না ভাসিয়ে সততার জোরে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। 

নিজের বক্তব্যে শিক্ষা বিস্তারে বর্তমান সরকারের অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকায় আমরা স্কুল করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের সিদ্ধান্ত প্রতিটি জেলায় সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। যে উপজেলায় কোনো সরকারি স্কুল নাই, সেখানে আমরা সরকারি স্কুলে প্রতিষ্ঠা করবো।

উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সংগ্রামী ইতিহাসের প্রতিও আলোকপাত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি সামরিক শাসনের সময় দেশে যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো তখন এই ছাত্রলীগের মাধ্যমেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এমনকি বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মাধ্যমেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙ্গালির যা কিছু অর্জন তা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। এর এই অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। 

৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের শাসকচক্রের কারাগার থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে ছাত্রলীগ মূল ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছিলো ছাত্রলীগের উদ্যোগেই।

এ সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল প্রতিকূলতা ও বাধা সত্ত্বেও তিনি বদরুন্নেসা কলেজে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

ছাত্রলীগের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উৎসব মুখর পরিবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর চলছে সম্মেলনের অন্যান্য কার্যক্রম।
 
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দু’বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার সম্মেলন হচ্ছে ৪ বছর পর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত