সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১০:৩৪

খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যান, আজ তার কারাবাসের এক বছরপূর্তি। এই সময়ে বিএনপি আইনি লড়াই চালালেও সেখানে সফল হতে পারেনি তারা। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার প্রত্যয় দলটির নেতাদের মুখে উচ্চারিত হলেও ন্যূনতম কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এরই মধ্যে খালেদা জিয়াকে ছাড়াই বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, কিন্তু সেখানে তাদের ফলবিপর্যয় হয়।

কারাগারে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল করলেও সেখান থেকে প্রাপ্তিযোগ হয়নি। উপরন্তু আরেকটি মামলায় সাজার রায় এসে গেছে এর মধ্যে: আরও মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোয় আটকে গেছে মুক্তি; অংশ নিতে পারেননি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও। এই অবস্থার মধ্যে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে এক বছর কেটে গেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।

দলীয় চেয়ারপারসনকে যে এতদিন বন্দি থাকতে হবে, তা তখন ‘কল্পনাই করতে পারেননি’ বলে বৃহস্পতিবারই এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ বলেছেন, “কোনো দিন কল্পনা করতে পারি নাই যে বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী এবং তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে একটা তুচ্ছ ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেবে। পাঁচ বছরের সাজায় আপিল ফাইল করার পর সাত দিনের বেশি উনার জেলখানায় থাকার কথা নয়।”

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ৩৬ বছরের। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর সাত দিন বন্দি ছিলেন তিনি। তখন তাকে রাখা হয়েছিল সংসদ ভবনের একটি বাড়িতে।
তবে সেবারের বন্দিদশার সঙ্গে এবারের পার্থক্য হচ্ছে এখন তিনি বন্দি আছেন দুর্নীতির দায়ে দোষি সাব্যস্ত হয়ে। তখন যে মামলাগুলোর হয়েছিল, তার একটি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা।

এতিমদের জন্য আসা দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে করা এই মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দোষি সাব্যস্ত করে ৫ বছরের সাজা দিয়ে রায় দেন ঢাকার জজ জজ মো. আখতারুজ্জামান। রায়ের পর ওই দিনই নাজিমউদ্দিন সড়কের ওই কারাগারে নেওয়া হয় ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে।

এর মধ্যেই ২৯ অক্টোবর হয়ে যায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়; এবার একই জজ মো. আখতারুজ্জামান এই দুর্নীতির মামলায় খালেদাকে দেন সাত বছরের সাজা।

তার একদিনের মধ্যে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় আপিলের রায় আসে হাই কোর্ট থেকে। খালেদা জিয়ার বয়স ও অবস্থান বিবেচনায় নিম্ন আদালতের বিচারকে আখতারুজ্জামান তাকে কম সাজা দিলেও তাতে সায় দেয়নি হাই কোর্ট।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে হাই কোর্ট বলেন, “ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে (খালেদা জিয়াকে) সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। কারণ সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করার ক্ষেত্রে যাতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়।”

স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ এক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। এরপর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ‘৮৪ সালের ৩ মে ও ‘৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিন দফায় বন্দি হয়েছিলেন তিনি। তবে তখন ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাসায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তাকে। তার ২০ বছর পর বন্দি হলেও তিনি ছিলেন সংসদ ভবনের মতো স্থানে একটি বাড়িতে। কারাগারের কুঠুরীতে এবারই প্রথম গেলেন তিনি।

দুটি মামলায় রায় হওয়ার পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও অন্তত ৩৪টি মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে নাইকো মামলা, গ্যাটকো মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলার বিচার চলছে। এগুলো দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত। বাকি মামলাগুলো রাষ্ট্রবিরোধী ও অপরাধজনিত মামলা। যানবাহনের আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা, ভুয়া জন্মদিন পালন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা। এর মধ্যে ২৬টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। এছাড়া কুমিল্লায় তিনটি, পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত