শাকিলা ববি

১১ জুলাই, ২০১৯ ০০:১৫

মহানগর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে তৎপর প্রার্থীরা, আছে শঙ্কাও

৩ মাসের আহ্বায়ক কমিটিতেই পাঁচ বছর পার

২০১৪ সালে আলম খান মুক্তিকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছিলো মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি। কথা ছিল ৩ মাসের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করে সম্মেলনের মাধম্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি আহ্বায়ক কমিটি।

এমনকি, আহ্বায়ক কমিটির ৫ সদস্যের মধ্যেও রয়েছে মতবিরোধ। পাঁচবছরে একসাথে একবারও বসতে পারেননি আহ্বায়ক কমিটির এই পাঁচ সদস্য। ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন হলেও তা নিয়েও আছে নানা অভিযোগ। দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাদের মূল্যায়িত না করে বহিরাগতদের ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে পদপদবী দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

নানা অভিযোগ, অসন্তোষ আর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২৭ জুলাই সিলেট মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন মহানগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা। দলীয় কর্মীদের সাথে গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত কর্মীরাও।

মহানগর যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ৫ বছরের আহবায়ক কমিটির জাল থেকে বেরিয়ে আসতে উদগ্রীব সকলে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলন আহবান ও তড়িগড়ি করে ভোটার তালিকা তৈরি করা নিয়ে মহানগর যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধা বিভক্তি। যার ফলে প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। এত দ্বিধা বিভক্তি ও শঙ্কার মধ্যেও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সকল প্রার্থীরা।  

সম্মেলনকে তারিখ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ সংখ্যা সম্মেলনের আগ মুহূর্তে আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

সভাপতি পদে বর্তমান আহবায়ক আলম খান মুক্তির প্রার্থী হচ্ছেন তা নিশ্চিত। তার পাশাপাশি সভাপতি পদে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন যুবলীগ নেতা শান্ত দেব ও যুবলীগের আগের কমিটির সদস্য শ্যামল সিংহ।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন- বর্তমান আহবায়ক কমিটির ১ম যুগ্ম আহবায়ক মুশফিক জায়গিরদার, ২য় যুগ্ম আহবায়ক সেলিম আহমেদ সেলিম। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রলীগ, সুবেদুর রহমান মুন্না, আব্দুল লতিফ রিপন, জাকিরুল আলম জাকির ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নেতা এম রায়হান উদ্দিনের নাম আলোচিত হচ্ছে।

সভাপতি প্রার্থী শান্ত দেব বলেন, এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অনেক দ্বিধাবিভক্তি আছে। দীর্ঘদিন ধরে ত্যাগী নেতাদের যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আবারো যেন তাদের ভোটের অধিকার বঞ্চিত করা না হয়। কারণ যে ভাবে কাউকে না জানিয়ে ওর্য়াড কমিটি ও ভোটার তালিকা করা হয়েছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আছে। দলের একটি বড় অংশকে বাদ দিয়ে ৩ মাসের কমিটি নিয়ে ৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছে কয়েকজন। এখন পরিবর্তন দরকার। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে অবশ্যই নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। তাই কেন্দ্রের প্রতি বিশ্বাস রেখে আমি প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি।

আরেক সভাপতি প্রার্থী শ্যামল সিংহ বলেন, এই নির্বাচন একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হচ্ছে। কারণ সিলেট যুবলীগ এককেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ওয়ার্ড কমিটিতে হাইব্রিডদের পদ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সুদৃষ্টি না থাকলে এটা একটা আইওয়াশ নির্বাচন হবে। তারপরও  সকল ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। প্রচার চালাচ্ছি সুষ্ঠু ,নির্বাচনের আশায়।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান আহবায়ক কমিটির ১ম যুগ্ম আহবায়ক মুশফিক জায়গিরদার বলেন, মাঠে ছিলাম মাঠে আছি। আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি। তাই এই সম্মেলনকে ঘিরে আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী। এই যুবলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। আহবায়ক কমিটিতে থাকা অবস্থায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সম্মেলন করার। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা আমরা করতে পারিনি। তবে আমরা সিলেট মহানগর যুবলীগ কোনো কমতি রাখিনি। সব সময় সকল নেতাকর্মীদের সংস্পর্শে ছিলাম। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর যুবলীগ একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দলে পরিপূর্ণতা নিয়ে আসবে। সেই লক্ষেই প্রচার প্রচারণা করছি। এবং নির্বাচনী মাঠে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি।  

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এম রায়হান উদ্দিন বলেন, ৩ মাসের কথা বলে ৫ বছর চালানো হলো মহানগর যুবলীগ। এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের। আমরা যারা ছাত্রলীগ করে যুবলীগ করতে এসেছি আমরা চাই যুবরাই যুবলীগের নেতৃত্ব দিবে। দীর্ঘদিন যাবত সিলেটের যুবলীগ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। ঝিমিয়ে পড়া সেই যুবলীগকে জাগিয়ে তোলার জন্য প্রার্থী হয়েছি। সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন হলে কর্মীরা যোগ্য নেতাকেই নির্বাচন করবে।

এ ব্যাপারে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে পরে ফোন দেবেন বলে জানান। পরে আর ফোন দেন নি মুক্তি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৭ জুলাই সিলেট মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আলম খান মুক্তিকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন- মুশফিক জায়গিরদার, সেলিম আহমেদ সেলিম, আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাইফুর রহমান খোকন।    

নেতা কর্মীদের অভিযোগ- ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হলেও দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ৩য় যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ, ৪র্থ যুগ্ম আহবায়ক সাইফুর রহমান খোকন। ৩ জনের মতামত অনুযায়ী সব কিছুর  সিদ্ধান্ত হয়ে আসছে এতদিন। এর ছাপ পড়েছে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ওর্য়াড কমিটি ও ভোটার তালিকা তৈরিতেও।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত