সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ আগস্ট, ২০১৫ ১১:৪০

লতিফ সিদ্দিকীর আপিলে সুপ্রীম কোর্টের ‘নো-অর্ডার’

সংসদ সদস্য পদ সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের তলবের নোটিশ আপিল বিভাগেও স্থগিত না হওয়ায় ইসির শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনাহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ রোববার লতিফের আবেদন শুনে ‘নো অর্ডার’ দেয়। ফলে এ বিষয়ে লতিফের রিট আবেদন খারিজ করে দেওয়া হাই কোর্টের আদেশই বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের আদেশের পর লতিফের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়েছিলাম আপিল বিভাগ তাতে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছে। আমরা এখন নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছি।”

দল থেকে বাদ পড়ায় লতিফের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না সে বিষয়ে এই শুনানিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও ডেকেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, রবিবার সকাল ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন শুনানি গ্রহণ করবে।

এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'লতিফ সিদ্দিকীর হাইকোর্টের রিট আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। তাই শুনানির জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব আয়োজন রাখা হচ্ছে। শুনানির আগে আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া গেলে ইসি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।'

গত ৬ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও লতিফ সিদ্দিকীকে আলাদা নোটিশ পাঠানো হয়।

পরে ১৬ আগস্ট ইসির শুনানির এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন লতিফ সিদ্দিকী। রিট আবেদনে ইসি, আইন সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ইসির উপসচিবকে (আইন) বিবাদী করা হয়।

এরপর ২০ আগস্ট হাইকোর্ট লতিফ সিদ্দিকীর রিট আবেদন খারিজ করলেও ওই দিনই তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগ 'নো-অর্ডার' বলে আপিল খারিজ করে দিলেন।

আপিল বিভাগের 'নো-অর্ডারের' আগে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রিট খারিজ সংক্রান্ত আদেশ দেন। আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোরশেদুল আলম।

গত রবিবার (১৬ আগস্ট) লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদের বিষয়ে ইসির শুনানির এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। রিটে নির্বাচন কমিশন, আইন সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিবকে (আইন) বিবাদি করা হয়েছে।

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি সহ অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। প্রথমে মন্ত্রিসভা থেকে এবং পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।

লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কারের ৯ মাস পর গত ৭ জুলাই জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়ে তা জানানো হয়। এরপর ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে তার বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন স্পিকার।

নিউইয়র্কে তার মন্তব্যকে ঘিরে দেশে ধর্মাশ্রিত রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা প্রকাশ্যে লতিফ সিদ্দিকীর শিরচ্ছেদ, দোররা মারাসহ বিভিন্ন দাবি জানাতে থাকে। এর জের ধরে প্রথমে মন্ত্রীসভা থেকে তাঁকে অপসারণ এবং পরে দল থেকেও বহিস্কার করা হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে লতিফ সিদ্দিকী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হলে নয় মাস কারাগারে কাটান টাঙ্গাইলের এই সাংসদকে। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান তিনি।

লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের আট মাস পর বিষয়টি জানিয়ে আওয়ামী লীগের পাঠানো স্পিকার শিরীন শারমিনের হাতে পৌঁছায়।

এরপর সংবিধান, মেম্বার অফ পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট, সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মেনে বিতর্ক নিষ্পত্তির কার্যক্রম নেওয়া হয়।

এ অবস্থায় লতিফের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, তা মীমাংসার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তারপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে ২৩ অগাস্ট শুনানিতে ডাকা হয়। লতিফ সিদ্দিকী যে রিট আবেদন করেছেন, তাতে কমিশনের দেয়া চিঠির কার্যকারিতা স্থগিতের আরজি জানানো হয়েছে। ওই চিঠি কেনো বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুলও চাওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন, আইন সচিব, নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (আইন) ও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে এই রিট আবেদনে বিবাদী করেছেন লতিফ। তার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

হাইকোর্টের শুনানিতে জ্যোর্তিময় বলেন, সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে শুধু ৬৬(২) ও ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিতর্ক নিষ্পত্তির জন্য স্পিকার ইসিতে পাঠাবেন ও ইসি তা শুনানির করবে।কিন্তু আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে ৬৬(২) ও ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। তাই নির্বাচন কমিশনের শুনানির এখতিয়ার নেই।

সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদে সাংসদ নির্বাচিত হওয়া এবং পদে থাকার অযোগ্যতার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। কোনো উপযুক্ত আদালত কাউকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করলে, তিন দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করলে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকলে, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইনের অধীন কোনো অপরাধে দণ্ডিত হয়ে থাকলে সংসদ সদস্য হিসাবে অযোগ্যতার কথা বলা হয়ে এই অনুচ্ছেদে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূণ্য হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে।

আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া জানান, মেম্বার অফ পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট-১৯৮০ এ বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া বলা আছে। সেখানেও ওই দুটি অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিরোধের কথা বলা আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত