সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ আগস্ট, ২০১৫ ১৪:১৬

আওয়ামী লীগ নেতারা মোশতাক সরকারে যোগ দিয়েছিলেন, জাসদ নয় : ইনু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ নেতারা মোশতাক সরকারে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু জাসদ যোগ দেয়নি বলে জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি সাম্প্রতিক সময়ে জাসদকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের দেওয়া বিবৃতিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন।
 
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হঠৎ করে এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় চার নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গঠিত খন্দকার মোস্তাকের সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জাসদের কোনো নেতা-কর্মী সেই সরকারে যোগ দেননি।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে মুশতাক সরকারের রোষানলে পড়েছিলো জাসদ।

তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাসদের কি ভুমিকা ছিল তা পত্র-পত্রিকায় ঐ সময়ই প্রকাশিত হয়েছে। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর মুশতাক সরকারের বিরোধীতা করে প্রচারপত্র বিলি করেছিল জাসদ। একারণে মুশতাক সরকারের রোষানলে পড়ে দলটি। ঐ সময়ে জাসদের ৭০ এর বেশী নেতাকর্মী নিহত হয়। কারাগারে যায় অনেকে। তাই আজ যারা জাসদকে জড়িয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছে তা ভিত্তিহীন।

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির ঐক্য নষ্ট করার জন্য ই এমন টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে তা ঠেকিয়ে দিতেই হয়তো অনেকে জাসদের সমালোচনা করছেন বলে মনে করছেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যে মূহুর্তে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ চলছে। সেই মুহুর্তে এধরনের অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। আর এতে করে লাভবান হবে জঙ্গি আগুন সন্ত্রাসী বিএনপি জামাত।” তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের এই ঐক্য কেউ নষ্ট করতে পারবে না।

জাসদ সভাপতি বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে জাতীয় চার নেতার পরিবার ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেকেই মুশতাক সরকারের আনুকূল্য চেয়েছেন। কখনোই তা করেনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল।

এ বিতর্কের শুরুটা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও দলের প্রভাবশালী নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি সোমবার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় জাসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জাসদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূলরহস্য বের করতে হবে, কারা-কারা জড়িত ছিল।

পরে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ভূমিকা স্পষ্ট করার দাবি জানান।  দুই দলের নেতাদের একই সুরে বক্তব্য দেওয়ার জের ধরে ওইদিনই গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে চরম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে জাসদ। ‘একই ভাষায়, একই সময়ে জাসদের বিরুদ্ধে’ দুই দলের বক্তব্যের যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাসদ।

দলটির মতে, এ ধরনের বক্তব্য ঐক্যের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং শত্রুপক্ষের হাতকে শক্তিশালী করবে। দলের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়ার যৌথ স্বাক্ষরে দেওয়া এই বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ তদন্ত, তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জেরা, আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণের কোথাও বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জাসদের সংশ্লিষ্টতার সামান্যতম বিষয় আসেনি। তারপরও শেখ সেলিম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু সত্যের অপলাপই নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

এদিকে, মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপটেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামও একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জাসদের কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল।

এদিকে, জাসদের বিবৃতির পরদিন মঙ্গলবারও এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দলীয় নেতা শেখ সেলিমকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, আজ আমাদের নেতা শেখ সেলিমের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির বক্তব্যের সঙ্গে সুর মেলানোর যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার কোনও যৌক্তিকতা নেই। যে যেখান থেকে দেখুক না কেন, ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তির কোনও সুযোগ নেই।

বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন বলে মন্তব্য করে হানিফ। তিনি বলেন, জাসদ ও ন্যাপসহ যারা বাম রাজনীতি করতেন, ৭২ থেকে ৭৫-এ তারা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে ছিল যে, একটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যা-যা করণীয়, তারা তা-ই করেছিলেন। আর তারাই ওই সময় তৈরি করেছিলেন জাতির জনকের  হত্যার প্রেক্ষাপট।

হানিফ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য হাটবাজার লুটপাট, ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, সাধারণ মানুষকে হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা, এমনকি ঈদের নামাজের জামাত শেষে আওয়ামী লীগের এমপিদের হত্যা পর্যন্ত করেন তারা। এ সমস্ত বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল একটাই, বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অস্থিতিশীল করা। সেই কারণেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছিল। ওই বাম সংগঠনের অনেক নেতা ইতোমধ্যেই স্বীকারও করেছেন বলেও হানিফ জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত