সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ আগস্ট, ২০১৯ ০১:১৬

সমালোচিত সেই পোস্টারের ব্যাপারে ‘জানেন না’ ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। ছাত্রলীগের এই পোস্টার নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করছেন অনেকেই। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, এই পোস্টার ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

ওই পোস্টারে বলা হয়, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পবিত্র কুরআন খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পোস্টারের নিচে লেখা আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সঞ্চালনা করবেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। প্রধান অতিথি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। কুরআন তিলাওয়াত করবেন বিশ্বজয়ী হাফেজ ও কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, সাইদুল ইসলাম আসাদ, তাওহিদ বিন আলী লাহোরি, সাইফুল ইসলাম আল হুসাইনি, তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান তকী ও তারেক জামিল। হামদ-নাত পরিবেশন করবেন জাগ্রত কবি মুহিব খান, আনিছ আনসারী, হাফেজ এমদাদুল ইসলাম, মামুন আনসারী, কাজী আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, এনামুল কবির, সফিউল্লাহ বেলালী, ইসহাক আলমগীর, হাসনাত রায়হান ও ইশতিয়াক আহমাদ।

এই পোস্টারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থেকে শুরু করে ফেসবুকে বিভিন্নজনের টাইমলাইন, গ্রুপ ও পেজে ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পোস্টারে সব সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার হলেও ওই পোস্টারে তাঁদের ছবি ছিল না। পোস্টারটির নকশা অনেকটাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের পোস্টারের মতো বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।

সোমবার সকাল থেকে পোস্টারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেলেও রাত ১১টায় ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই পোস্টার ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই্। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউই ওই অনুষ্ঠান ও পোস্টার সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। ওই পোস্টার প্রকাশনা ও প্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

পোস্টারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ বলেন, ‘আগস্ট এলেই মুক্তিযোদ্ধের বিপক্ষের শক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। ছাত্রলীগ যেহেতু আওয়ামী লীগের অন্যতম এটি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন, তাই তারা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে চায়। তবে আমরা তা হতে দেব না। আমরা তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ আন্দোলনের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন। এর আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ রকম ধর্মভিত্তিক কোনো প্রোগ্রাম আয়োজন করেনি। এটা একটি সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার উপলক্ষ ছিল মাত্র। আমি মনে করি, এটা কোনো সুচিন্তিত প্রোগ্রাম নয়, একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। যার ফলে আমাদের মাদার সংগঠন আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন তাঁর ফেসবুকে লিখেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের সময় জিয়ার ছবি সংবলিত পোস্টার মধুতে দেখেই ছিড়ে ফেলা ও আগুন লাগানো হয়। হিজবুত তাহরিরের লিফলেট পোস্টার দেখলে ছিড়ে ফেলা হয়, সামনে পেলে দৌড়ানি দেওয়া হয়। অথচ এই পোস্টার আজ সকাল থেকে মধুসহ বিভিন্ন হলের গেইটে লাগানো। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলল না, পোস্টার উচ্ছেদও করা হলো না। বড় বড় নেতা সবাই যার যার ওয়ালেও এই পোস্টার আপলোড দিল। অথচ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাত ১১টায় বলা হচ্ছে, এটা ছাত্রলীগের পোস্টার নয়। যদি এটা ছাত্রলীগের পোস্টার না হয়, তাহলে দিন থেকে রাত, হল থেকে মধু, মধু থেকে ঢাকা শহরে কীভাবে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে? একজনও কি এই পোস্টার দেখেননি কিংবা একটা কর্মীও কি দেখেননি? এটা ছাত্রলীগের পোস্টার নাহলে তৎক্ষণাৎ কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত না। এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে ভূগোল বুঝিয়ে লাভ নেই। সবাই জানে এই পোস্টার কারা করেছে। ভুল স্বীকার করার মধ্যেই মহত্ত্ব রয়েছে, ভুলের পক্ষ নিয়ে আবার বিতর্ক না বাড়ানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এটা যারা করেছে অতি উৎসাহী হয়ে করেছে। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের সভাপতির কাছে এক দল কওমি ছাত্র এসেছিলেন। তাঁরা শোক দিবস উপলক্ষে একটা প্রোগ্রাম করতে চায় জানালে সভাপতি তাঁদের প্রোগ্রাম করার রোডম্যাপ চান। কিন্তু তাঁরা সেটা না করে অতি উৎসাহী হয়ে পোস্টার ছাপিয়েছে। আমরা তাদের ডেকেছি। রাতে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাব।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত