সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৩:৫৬

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়ার কবরে খালেদার ফুল

দলের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের প্রতিষ্ঠাতা ও জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি।

এ সময় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, এনাম আহমদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন প্রমূখ।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হাজার হাজার নেতাকর্মী সকাল থেকেই শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধি চত্বরে জড়ো হন। তারা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও নিজ নিজ এলাকার নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষে খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি উপলক্ষে আগে থেকেই সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর পাশের জিয়ার সমাধিতে প্রবেশের মূল রাস্তার শুরুতেই পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে।

ওই রাস্তা দিয়েই সমাধিতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে নেতাকর্মীরা দলবদ্ধ হয়ে লেকের পূর্ব পাশ দিয়ে সমাধি চত্বরে প্রবেশ করেন। খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা পূর্বপাশের বিকল্প রাস্তা দিয়ে গাড়িযোগে সমাধিস্থলে যান।

টানা ৯ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা ও ২ বছর সংসদের বাইরে থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) বিএনপি পালন করছে প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছর। বাংলাদেশের রাজনীতির বিশেষ এক পট পরিবর্তনে ক্ষমতা বলয়ের মধ্য থেকেই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

প্রতিষ্ঠার পৌনে ৩ বছরের মাথায় এক সেনা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে প্রথম সংকটে পড়ে বিএনপি। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যায় দলটির।

এক সেনা শাসকের হাত থেকে আরেক সেনাশাসকের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। ওই আন্দোলনের সফল সমাপ্তিতে ৯ বছরের মাথায় ক্ষমতা ফিরে পায় বিএনপি।

কিন্তু ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় বসা বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বেঁধে নিজেদের জন্য অনিবার্য পরিণতি ডেকে এনেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

তারা বলছেন, জামায়াতকে ‘জীবন-মরণ সঙ্গী’ বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের মর্মমূলে কুঠারাঘাত করেছে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের হাতে গড়া দল বিএনপি। সে কারণেই চলমান সংকট উত্তরণে ভুঁইফোড় ও নামসর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক দল ছাড়া মূলধারার কোনো রাজনৈতিক দলকে পাশে পাচ্ছে না তারা।

দলের ভেতর ও বাইরে জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করার দাবি ওঠলেও এ দাবিতে কর্ণপাত না করায় দেশের তরুণ সমাজের বিরাজভাজন হয় দলটি। এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে কেবল ক্ষমতার বাইরেই নয় সংসদের বাইরেও চলে যায় বিএনপি। এ নির্বাচন বর্জনকে যতটা না বিএনপির সিদ্ধান্ত, তারচেয়ে বেশি জামায়াতে ইসলামীর বুদ্ধি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

নানা সমস্যায় জর্জরিত বিএনপি বার বার চেষ্টা করেও জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছে না। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল করেছিল তারা। এরপর ২০১৩ ও ২০১৪ সালের বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও করতে পারেনি জাতীয় কাউন্সিল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকও হচ্ছে না নিয়মিত। সর্বশেষ ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আরেকটি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করবে বিএনপি। এ উলক্ষে এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা। বিকেল ৩টায় রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন এবং রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।

পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন জিয়াউর রহমান। পরে জাগদল বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়। জিয়াউর রহমান এই দলের প্রথম চেয়ারম্যান হন। অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী হন প্রথম মহাসচিব।

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয় লাভ করে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জয় লাভ করে।

ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই বছরের মাথায় জিয়াউর রহমান সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। পরে ১৯৮৩ সালে সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন।

এরপর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি সর্বাধিক আসনে জয় লাভ করায় সরকার গঠনের সুযোগ পায়।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্যজোট ফের সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয় বিএনপির। এ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পায় তারা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে এই মুহূর্তে ক্ষমতা ও সংসদের বাইরে অবস্থান করছে বিএনপি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত