শাকিলা ববি

০২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:৩৭

পরিবর্তন আসছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে

৫ ডিসেম্বর সম্মেলন

দীর্ঘ ১১ বছর পর আগামী ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ। এবারের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা করতে নতুন নেতৃত্বের দাবি তৃণমূলেরও।

২০০৫ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১১ সালে কোনো সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির পর সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান ২০১৫ সালে মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন। বয়সের ভারে তিনি ন্যূজ। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে তিনি ততটা সক্রিয় নন।

নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন চান তারা। বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবার প্রার্থী হবেন না বলে জানা গেছে। এতে করে সভাপতি পদে পরিবর্তন আসার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। পরিবর্তন আসতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। এবার তিনি সভাপতি হতে ইচ্ছুক। তবে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নির্বাচন নয়, বরং দলের সভানেত্রীর মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমেই বাছাই হবে শীর্ষ নেতৃত্ব।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আগামী ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে তারিখ নির্ধারণের আগে থেকেই সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

গত ৮ বছরে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নিজেদের আওতাধীন ১৩টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৬টিতে আংশিক কমিটি করতে পেরেছিলেন দায়িত্বরতরা। আংশিক কমিটি হওয়া ৬টি উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ বাকি ৭টি উপজেলায় সম্মেলন করে জেলার সম্মেলনের আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন। শুক্রবার বালাগঞ্জ উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

আসন্ন সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি প্রার্থীর সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি ও সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন- বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সুজাত আলী রফিক, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহির ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরী।

সভাপতি প্রার্থী বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের গতি সঞ্চার হবে। পার্টির স্বার্থে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা সমঝোতার ভিত্তিতে যেভাবে নেতা নির্বাচন করা হোক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে সবকিছু স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হলে ভালো হয়। কমিটির দুর্দিনে যারা পার্টির বিপক্ষে কাজ করেছেন আসন্ন কমিটিতে যেন তাদের বর্জন করা হয়।

আরেক সভাপতি প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, নেত্রী যে দায়িত্ব দিবেন সেটাই মেনে নেব। সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। জেলা সম্মেলনের আগেই উপজেলাগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়েছে।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে কাজ করছেন। এখন আমাদের নেত্রী যা চান তাই হবে। নেত্রীর উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস। তিনি দলের মধ্যে যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছেন আশা করি আমাদের আসন্ন কমিটিতেও এর প্রভাব পড়বে। আশা করি দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে দেওয়া হবে ও ত্যাগীদের পদ দেওয়া হবে।

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। সেই ছাত্রলীগ থেকে শুরু। আসন্ন কমিটিতে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও নেত্রী যেটা ভাল মনে করেন তাই হবে। আমি ইলেকশন বা সিলেকশন সব কিছুর জন্যই প্রস্তুত আছি। আমরা যারা স্বচ্ছ রাজনীতি করি তাদের জন্য বর্তমান সময়টা অনেক ভালো। কারণ দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চলছে। এখন আর যে কারও নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। কারণ কে দলের জন্য কি করেছেন, কার চরিত্র কেমন সব নেত্রী জানেন। তাই আমি মনে করি নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি আসলে ভাল হবে।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সমর্থন রয়েছে জানিয়ে আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জগলু চৌধুরী বলেন, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরাই এবার নেতৃত্বে আসবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত