সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৭:১২

নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হারিয়েছিলেন খোকা

রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। টানা এক দশকেরও বেশি সময় ঢাকার নগরপিতা ছিলেন তিনি। শুধু মেয়রই নন, মন্ত্রিত্বও করেছেন খোকা। দুই দুবার মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির এই নেতা।

একসময়কার দাপুটে বাম রাজনীতিক খোকা আশির দশকে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে। বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। আমৃত্যু তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, সাদেক হোসেন খোকা নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোসেন ক্যাটারিং ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় বাম রাজনীতিতে সক্রিয় হন খোকা। পরে বামপন্থী রাজনীতি ছেড়ে আশির দশকে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন।

১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙা কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হলেও তা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পাহারা দিয়ে সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেন। এতে খোকা পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে বিএনপির মনোনয়নে জয়ী হন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন খোকা। ওই নির্বাচনে খোকা পেয়েছিলেন ৭৬,৬০১ ভোট, অন্যদিকে শেখ হাসিনার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৯,৩৬২। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন।

২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী হন। পরে তাকে ঢাকার মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি বিপুল ভোটে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হন। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি।

খোকা প্রথমে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। পাশাপাশি খোকাকে সভাপতি ও আবদুস সালামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।

ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলে যে সংস্কারের দাবি উঠেছিল, তার প্রতি সাদেক হোসেন খোকার সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে খোকা সেই অভিযোগ অস্বীকার করতেন। বিএনপির সবশেষ কমিটিতে খোকাকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।

২০১৪ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এর পর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়কালে দেশে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়। এর কয়েকটিতে তাকে সাজাও দেয়া হয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি দেশে ফেরত আসতে চাইলে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে দেশে ফিরতে পারেননি। এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম জানান, খোকার পরিবার দেশে ফেরার আবেদন করলে সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে ট্রাভেল পারমিটে ব্যবস্থা করবে। এবং একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও আইনি কোন সমস্যার মুখে পড়বেন না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত