সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ২০:০০

আওয়ামী লীগে জামায়াত-হেফাজত ঢুকে গেছে, দাবি ওলামা লীগ সভাপতির

আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী ওলামা লীগের (একাংশ) সভাপতি মাওলানা মো. আখতার হোসাইন বোখারী। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামায়াত-শিবির-হেফাজতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এছাড়া, সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু হিন্দুত্ববাদী ও মৌলবাদী সংগঠনও এ বিষয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এরা কোরবানি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কিছু বিষয় সামনে এনে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের কোরবানিতে নিরুৎসাহিত করতে চায়। সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনকে ম্লান করে এরা প্রমাণ করতে চায় যে, আওয়ামী লীগ সরকার কোরবানির বিরোধী।

একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে মাওলানা বোখারী এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন তারাই আসল আওয়ামী ওলামা লীগ। ওলামা লীগ বলে অন্য কোন সংগঠন আর নেই।

আওয়ামী লীগের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দলের সংগঠন হয়েও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও মতাবলম্বীদের বিষয়ে বিরূপ ধারণা ও ধর্ম পালন বিষয়ে কথা বলা স্ববিরোধী নয় বলেও সাক্ষাৎকারে দাবি করেন বোখারী।

তিনি বলেন, নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ যেমন ফরজ তেমনি পবিত্র ঈদুল আজহায় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরবানি দেয়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। যেখানেই সুবিধা পাওয়া যাবে সেখানেই কোরবানি করা যাবে। কিন্তু একটি মহল কোরবানির পশুর হাট ও কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির মতো একটি বিষয়ে নানা বিভ্রান্তিমূলক কথা ছড়াচ্ছে।

বোখারী বলেন, কোরবানির পশুর হাট কম হলে কোরবানির পশু কেনা সমস্যা হবে। পশু জবেহ করার স্থান নির্ধারণ করে দিলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পশু কোরবানিতে নিরুৎসাহিত হবে। এতে করে বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। জামায়াত-শিবির-বিএনপি, হেফাজতের নেতাকর্মীরা কোরবানি নিয়ে কথা বলার সুবিধা পাবে। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রমাণ করতে চায় যে, আওয়ামী লীগ সরকার ঈদুল আজহায় পশু কোরবানিতে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা ইসলামের খেদমত করে না। তারা পশু কোরবানি করতে দেয় না এ ধরনের প্রচার- প্রপাগান্ডা চালাবে। আর এভাবেই তারা ষড়যন্ত্র করে ফায়দা লুটতে চায়।

তিনি বলেন, একজন মুসলমানের বাড়ি থেকে বহু দূরে কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ, শিশু, মহিলারা কোরবানির স্থানে যেতে পারবে না। এছাড়া, কোরবানির মাংস কাটা, ছিলা, ভাগ করা, আনা-নেয়ায় খুবই সমস্যা হবে। কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারেও ঝামেলা পোহাতে হবে। এসব কারণে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কোরবানিতে নিরুৎসাহিত হবে। এতে করে কোরবানি কমে যাবে। ষড়যন্ত্রকারীরা এটাই চায়। তাদের মনোবাসনা তারা পূর্ণ করতে চায়।

মুক্ত চিন্তার মানুষ ও ব্লগারদের অনেককে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে ওলামা লীগের একাংশের সভাপতি বলেন, কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলমান দাবি করে আল্লাহর আদেশ ও পবিত্র কোরআন, হাদিসের নিয়মকানুন অমান্য করে তাহলে সে-ই নাস্তিক। সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে গেলো। সে ইবলিশের কাতারে চলে গেলো। বর্তমানে কিছু ব্লগারের মধ্যে এ ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আদমকে সেজদা করার জন্য আল্লাহতায়ালা ইবলিশকে হুকুম করেছিলেন। কিন্তু ইবলিশের দাবি ছিল আদম মাটির তৈরি। সে তাকে সেজদা করবে না। এ কারণেই সে ইবলিশ শয়তান।

দেশে আইন আছে, সংবিধান আছে, কোরআন- হাদিসের নিয়মকানুন ও নির্দেশনা আছে। এগুলো মানা ওয়াজিব। কিন্তু কেউ যখন এগুলো মানতে চায় না তখন সে ইবলিশের সমতুল্য। সে নাস্তিক। তবে ব্যক্তিজীবনে তারা কিভাবে চলবে না চলবে এটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমরা তাদেরকে নাস্তিক বলেই গণ্য করবো। তবে, সবাই নাস্তিক নয়, কিছু সংখ্যক নাস্তিক। আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ যারা অমান্য করবে তারাই নাস্তিক।

আওয়ামী লীগের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দলের সংগঠন হয়েও ভিন্নধর্মাবলম্বী ও মতাবলম্বীদের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য স্ববিরোধী নয় উল্লেখ করে মাওলানা মো. আখতার হোসাইন বোখারী বলেন, নবী এ করিম বলেছেন, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। পূজা হিন্দু ধর্মীয় ব্যাপার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুরো জাতির ভোট পেয়েছেন। হিন্দুদের ভোট যেমন পেয়েছেন, খ্রিস্টানদেরও পেয়েছেন। এদের খেদমত করা তার দায়িত্ব। দুর্গাপূজায় ২৮ হাজারের বেশি মন্ডপ হয়। ওখানে সরকারি সাহায্য দেয়া হয়। মন্ডপ ২৮ হাজারের বেশি হোক আমাদের আপত্তি নেই। পূজা না হোক এটাও আমরা বলি না।

কিন্তু আমাদের যে, মসজিদ, মাদরাসা আছে আপনারা ওখানেও খরচ করেন। আমাদের এটাই দাবি। তবে, এটা স্ববিরোধী নয়।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কঠোর সমালোচনা করে মাওলানা বোখারী বলেন, ইসলাম অর্থ পবিত্র, শান্তি। ইসলামে বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা ও উলঙ্গপনার কোন স্থান নেই। যে অবস্থার মধ্যে থাকলে অশান্তি ঘটে বা দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে তা ইসলামের আইনের বাইরে চলে গেলো। পহেলা বৈশাখের নামে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ঘুরে। মেয়েছেলেরা হৈচৈ করে। গানবাজনা করে। এভাবে দুর্ঘটনা ঘটে। এটাতে আমাদের আপত্তি আছে। এটা যেমন ইসলাম সমর্থন করে না, তেমনি আমরা আলেম সমাজ ও ওলামা লীগও এটা সমর্থন করি না। তাই এসব বন্ধ করলে ভাল হয়।

ওলামা লীগসহ সমমনা ইসলামী ১৩টি দলের ১৩ দফাকে অনেকেই হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফার সঙ্গে তুলনা করছেন, বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওলামা লীগের একাংশের সভাপতি বলেন, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। যারা এসব প্রচার করে এটি তাদের ভুল ধারণা। আমরা মনে করি যারা এসব প্রচার করে তারা ঐ বিএনপি-জামায়াত-শিবির-হেফাজত কাতারের লোক। এরা পাকিস্তানের দোসর। এরা সরকারকে বিভিন্নভাবে বেকায়দায় ফেলতে চায়। হেফাজত প্রধানমন্ত্রী ও দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল। তারা পতন ঘটাতে পারে নাই। এখনও তারা সেই পাঁয়তারা করছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলেম, ওলামা, পীর, মাশায়েখ, বুজুর্গ ব্যক্তিরা আছেন। তাই হেফাজত কিছুই করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগ মুসলমানদের দল দাবি করে মাওলানা মো. আখতার হোসাইন বোখারী বলেন, সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি। বঙ্গবন্ধু কাজের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করে গেছেন। তিনি মহান মানুষ ছিলেন। তাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা হিসেবে সকলেরই মানা উচিত। এদেশে বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে বড় মুসলমান ছিলেন। তিনি নিয়মিত নামাজ, রোজা, যাকাত আদায় করতেন। দেশে ইসলামের প্রসারের জন্য যত বড় বড় কাজ তার সবই তিনি করে গেছেন। তিনি মদ, জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদ, কাকরাইল মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ- মাদরাসার উন্নয়নে তিনি কাজ করেছেন। ওআইসি সম্মেলনেও ইসলামের জন্য তার অবদান ছিল। তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইসলামের খেদমতে কাজ করছেন। তিনিও পিতার মতো ধর্মপ্রাণ। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাহাজ্জুত পড়েন। দেশে ইসলাম রক্ষা ও তা প্রসারে তিনিও কাজ করছেন। তবে, আওয়ামী লীগ ইসলামের দল হলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতিও আওয়ামী লীগ যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। আওয়ামী লীগের আমলে দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মানুষই তাদের নিজ নিজ ধর্ম সঠিকভাবে পালন করছে।

‘আমাদের ওলামা লীগই আওয়ামী লীগের মূলধারার ওলামা লীগ’ এমন দাবি করে মাওলানা মো: আখতার হোসাইন বোখারী বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের ডাকে। বিভিন্ন আলোচনা সভায় যাই। দলীয় খরছ তারা দেয়। তাই আমরাই মূলধারার ওলামা লীগ। আমি এই দলের সভাপতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার চিকিৎসার জন্য তিনি এক লাখ টাকাও দিয়েছিলেন। সেই ডকুমেন্টও আমার কাছে আছে। এতেই প্রমাণ হয় আমরাই মূল ধারার ওলামা লীগ। আর কেউ নয়।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত