সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

২৭ আগস্ট, ২০১৯ ১৩:৫৯

চট্টগ্রাম ওয়াসার দুর্নীতি তদন্তে প্রধানমন্ত্রী ও দুদকের হস্তক্ষেপ চায় ক্যাব

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বেঁধে দেয়া সময় পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডে প্রকৃত গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ নিয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ছলচাতুরীর অভিযোগ তুলেছে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

গণমাধ্যমে প্রেরিতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগের কথা জানানো হয়। এজন্যে ক্যাব চট্টগ্রাম প্রধানমন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

ক্যাব’র অভিযোগ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে গ্রাহক প্রতিনিধির তালিকায় ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাব’র প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে চিহ্নিত কতিপয় বিতর্কিত ব্যক্তির নাম পাঠানোর পাঁয়তারা শুরু করেছেন। ভোক্তা প্রতিনিধি থেকে ক্যাব’র প্রতিনিধির নাম বাদ গেলে আদালতে আইনি প্রতিকারের আশ্রয় নেয়া হবে। একই সঙ্গে গত ১০ বছরে বৈদেশিক ঋণে বাস্তবায়িত এবং চলমান সকল প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) এর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার গড়িমসির বিষয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে দিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তিতে কালক্ষেপণসহ নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছেন। ওইদিন ৪৬.০০.০০০.০৮৫.১১.০৪.২০১৮-৪৬০ স্মারকের আদেশে উল্লেখ করা হয় ‘পানি ব্যবহারকারীগণের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের সদস্য মো. সোলেমান আলম সেঠের মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬ এর ৬ (১) (গ) ও ৬ (২) ধারা অনুযায়ি উক্ত পদে আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে পানি ব্যবহারকারীগণের একজন প্রতিনিধির মনোনয়ন স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ এবং একই তারিখে ৪৬.০০.০০০.০৮৫.১১.০৫.২০১৮-৪৬১ স্মারকের অপর আদেশে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের পানি ব্যবহারকারীগণের সদস্য হিসেবে ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির জন্য কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কর্তৃক অনুরোধ করা হয়েছে। উক্ত পত্রের ছায়ালিপি এতদসংগে প্রেরণ করা হলো। এ পত্রের বিষয়ে আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে মতামত প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’। গত ০৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫২তম বোর্ড সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশনা প্রদান করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ নির্দেশনা পালন করেননি।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবসময় আন্তরিক এবং তার কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য ইতিমধ্যেই বিপুল বরাদ্দ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার আজ্ঞাবহ যে কাউকে গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে তৎপর। সে কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও ৫২তম বোর্ড সভার নির্দেশও উপেক্ষা করে কালক্ষেপণসহ নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন। ৫২তম বোর্ড সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বোর্ড সদস্য মো. সোলেমান আলম শেঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়াসা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বর্তমান সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ অর্থ চট্টগ্রাম ওয়াসাকে প্রদান করা হলেও কাজের মান, স্বচ্ছতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। প্রকল্পের নামে পুকুর চুরি যেমন ঘটেছে, স্বজনপ্রীতি ও লুটপাটও ঘটেছে। সে কারণে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে বাস্তবায়িত সকল উন্নয়ন প্রকল্পের সুষ্ঠু তদন্ত সম্পাদনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানানো হয়। নতুবা নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠন করে যাবতীয় প্রকল্পের গণতদন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসায় দীর্ঘদিন প্রকৃত ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকায় ভোক্তাদের সমস্যাগুলি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপনের সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা নং ৫ এর ১৬ উপ-ধারায় বলা আছে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দেশের সর্বত্র ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় ক্যাব সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণী ও কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করে আসলেও চট্টগ্রাম ওয়াসায় তা মানা হয়নি। তাই চট্টগ্রাম ওয়াসায় ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাব চট্টগ্রামের এই অভিযোগ সম্পর্কে সিলেটটুডে কোন স্বতন্ত্র অনুসন্ধান চালায়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত