সিলেটটুডে স্পোর্টস ডেস্ক

২৪ এপ্রিল, ২০১৫ ০৪:২৫

টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি!

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে মাত্র ৪১টি। তার মধ্যে ৭টি আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে। গত ১৬বছরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন ম্যাচ জয় ছিল না বলে সব হিসাব ছিল ঐ বছরওয়ারি হিসাবের মধ্যেই।

১৬বছরের আক্ষেপ শেষ! এখন নবপথের পথিক বাংলাদেশ, সে হিসাবে আগেকার পরাজয়গুলো এখন কেবল ইতিহাসের পাতায়। নয়া নয়া ইতিহাস লিখা হচ্ছে। কে জানে সে হিসাবের মধ্যে হয়ত ঢুকতে যাচ্ছে অদ্যকার একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, বাংলাদেশের অগণন দর্শকের প্রত্যাশা ত সেরকমই!

ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে ১৬ বছর না জেতার হাহাকার ছিল। সেটি মুছে দেওয়ার স্বপ্নে অবশ্য ২০১৪-এর এশিয়া কাপের পাকিস্তান ম্যাচটির অনুপ্রেরণাও ছিল। যে ম্যাচে এই কিছুদিন আগপর্যন্তও নিজেদের ওয়ানডে সর্বোচ্চ ৩২৬ রান করে হারার মধ্যেও জয়ের কাছাকাছি যাওয়ার তৃপ্তি ছিল। সুবাদে পরের বারের দেখায় পাকিস্তানকে ঠিক ধরে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা আরো দৃঢ় করে দিয়েছিল ২০১৫-এর বিশ্বকাপ পারফরমেন্স।

তারই ধারাবাহিকতায় এবার ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া ৩২৯ রানের বিশাল সংগ্রহে জয় দিয়ে শুরু। এরপর সিরিজ জয় থেকে শুরু করে একে একে ধরা দেয় পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের আনন্দও। কিন্তু আজ যখন সিরিজের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি সমাগত, তখন পেছন ফিরে কেবল উঁড়ে যাওয়ার স্মৃতিই।

বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জানালেন- 'আমরা ইতিবাচকভাবেই ভাবছি। তিনটি ওয়ানডে আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে শুরুটা ভালো করতে পারলে অসম্ভব নয়।' সে জন্য ওয়ানডে সিরিজের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলনই দেখতে চাইছেন তিনি, 'অবশ্যই আমরা জয়ের আশা করতে পারি। বোলাররা যেভাবে বোলিং করছে কিংবা ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাটিং, সেভাবে খেললে জেতার আশা করা যেতেই পারে।'

সে সঙ্গে এও বলে রাখলেন, 'সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি দল গড়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে আমাদের। যেমন ব্যাটিংয়ের সাত কিংবা আট নম্বরে একজন অসাধারণ হিটার কিংবা সাকিবের মতো আরো দু-তিনজন বোলার নেই।' না থাকলেও যা আছে, তা নিয়েও টি-টোয়েন্টির চাহিদা মেটানোর বিশ্বাস বাংলাদেশ অধিনায়কের, 'সাব্বির আছে। আমার মনে হয় ও বিশ্বের অন্যতম সেরা বিগ হিটার।

সৌম্য এবং তামিমও আছে। আছে মুশফিকও। ও ছোট হলেও বড় শট খেলতে পারে। সাকিব তো আছেই। সব মিলিয়ে আমাদের প্রথম পাঁচ-ছয়জন কিন্তু বিগ শট খেলতে পারে। সমস্যাটা হলো ওয়ানডেতে সেট হওয়ার সুযোগ আছে। টেস্টে তো সারা দিনই সময় থাকে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে সেট হতে পাঁচ-ছয় বলের বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। উইকেট পড়ুক আর না পড়ুক, শট খেলতেই হবে।'

পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল ৩১-১-এ। সিরিজ শেষে হিসাবটা ৩১-৪। এবার একমাত্র টি ২০ ম্যাচ। এই ফরম্যাটের সমীকরণে বাংলাদেশ পিছিয়ে ৭-০-এ। ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর কোনো সমীকরণকেই আর সামনে আনতে রাজি নন মাশরাফি। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানটা ৭-১-এ লেখাতে চান তিনি।

পাকিস্তানের অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি সংবাদ সম্মেলনে বলে গেলেন- আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে থাকা এই বাংলাদেশকে হারানো কঠিন কাজ হবে। তবে তারা নিজেদের এগিয়ে রাখতে চান এই ফরম্যাটে।

সাকিব-সাব্বির-নাসির-রনি-লিটনরা যে এমন মারমার-কাটকাট ব্যাটিং অনুশীলন করলেন, তার তাই একটাই অর্থ- ওয়ানডের মতোই টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে কোনোভাবেই জিততে দিতে চায় না বলেই বাংলাদেশ দলে লিটন দাসের মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যানকে নেওয়া হয়েছে। ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকেও নেওয়া হয়েছে, যার ব্যাটটাও ভালো চলে।

সম্ভাবনা আছে দু'জনের যে কারোরই আন্তর্জাতিক অভিষেকের। রুবেল হোসেনকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। তিনি স্কোয়াডে নেই। তিন পেসার খেলালে মুস্তাফিজুর সুযোগ পেতে পারেন। সম্ভাবনা আছে অলরাউন্ডার আবুল হোসেন রাজুরও। স্কোয়াডে থাকলেও আজ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানেরই বিপক্ষে। সাতটি ম্যাচের একটিও জিততে পারেনি। এই ইতিহাসও মনে করিয়ে দেওয়ার মতো।তবে ওয়ানডেতে ১৬ বছরের খরা যেহেতু কেটেছে এবারই, টি-টোয়েন্টি-র খরা না কাটার তো কোনো কারণই নেই। তা পাকিস্তান যতই এগিয়ে থাক, বাংলাদেশের ছেড়ে কথা বলার দিন তো শেষ হয়ে গেছে!

নতুন বাংলাদেশের সামনে পুরনো পাকিস্তান। বাংলা বছরের হিসাবে এখন বৈশাখ মাস, কালবোশেখি ঝড়ের সময়। মিরপুরে সে রকম এক ঝড় তোলার ইঙ্গিত আগেভাগেই দিয়ে রেখেছেন তামিম-সৌম্য-মুশফিক-সাকিব-মাশরাফিরা। মিরপুরে ঝড় ওঠলে লণ্ডভণ্ড হবে হয়ত করাচি-ইসলামাবাদ; তারিখটা লিখা থাকবে রেকর্ডবুকে- এপ্রিল ২৪, ২০১৫!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত