স্পোর্টস ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২৩:৪৭

অভিষেকের মতো শেষে ম্যাচে সেঞ্চুরি কুকের

১০২ ক্রিকেটার অভিষেক টেস্টে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি- এ আর এমন কী অর্জন! তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিসাব করলে সেখানে ইংলিশ ব্যাটসম্যানের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়, ১০ জন। তবে খুব কম সংখ্যক ব্যাটসম্যানই নিজেকে মেলে ধরে ক্রিকেটের ২২ গজকে রাঙাতে পেরেছেন অ্যালিস্টার কুকের মতো করে।

২০০৫-০৬ মৌসুমে ভারত সফরের প্রথম টেস্টের আগে মার্কাস ট্রেসকোথিকের অসুস্থতা ও ২১ বছর বয়সী এক যুবকের ম্যাচ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে অ্যান্টিগা থেকে নাগপুরে উড়ে যাওয়ার সময়টাতে ভাবার সুযোগই ছিল না ক্রিকেটের আকাশে নতুন তারকার উদয় হতে চলেছে। লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তি শুধু দূর দিগন্তেই মিলিয়ে দিলেন না ‍কুক, ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের জন্য লিখলেন অনুপ্রেরণার মহাকাব্য। দুই ইনিংসে ৬০ ও হার না মানা ১০৪ রান করতে ব্যাট করলেন সাড়ে ৯ ঘণ্টা! তাও আবার কাদের মুখোমুখি হয়ে? উপমহাদেশের স্পিন রাজত্বে গ্রেটেস্ট অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিংকে মোকাবিলা করে।

অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা সে দিনের সেই তরুণ নিজেকে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বানিয়ে বিদায় জানিয়েছেন ২২ গজকে। যার শুরুটাই ছিল ঝলমলে দিনের সোনালি আভায়, তার শেষটা আলোকিত সন্ধ্যার উচ্ছ্বসিত কোলাহলে না হলে অপূর্ণতা থেকেই যেত। ক্রিকেটদেবতা তা চাননি। গোটা ভারত সিরিজে যে ব্যাটে পড়েছিল মরিচা, সেই ব্যাটেই শেষ টেস্টে উঠলো সুরের ঝঙ্কার। শুরুর মতো শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করে বিদায় রাঙিয়ে নিলেন ‘রেকর্ড কিং’ কুক।

ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির নজিরও আছেন অনেক। কুকের এই অর্জনকেও খুব বড় করে হয়তো দেখার সুযোগ ছিল না। কিন্তু যখন তাকাবেন অভিষেক ও শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করা খেলোয়াড়ের তালিকায়, তখনই উজ্জ্বল হয়ে চোখে ধরা দেয় কুকের নামটি। ক্রিকেট ইতিহাসের মাত্র পঞ্চম ব্যাটসম্যান তিনি, যাদের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু ও শেষটা হয়েছে সেঞ্চুরি দিয়ে।

৯৬ রান করার পর আর অপেক্ষায় থাকতে চাননি সম্ভবত। জসপ্রিৎ বুমরাহর বলে বাউন্ডারি মেরে পূরণ করেন সেঞ্চুরি। আগের ৩২ সেঞ্চুরির চেয়ে এবারের মাহাত্ম্য যে অনেক বেশি, তার চোখমুখে ভেসে ওঠা তৃপ্তির রেখায় বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্ট। বাউন্ডারির সীমানায় বল স্পর্শ করার আগেই দুই হাত মেলে ধরে উদযাপন শুরু ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের।

এই উদযাপন যেন থামার নয়। প্রায় তিন-চার মিনিট ধরে চলা উদযাপনে সতীর্থ জো রুট তো বটেই অভিনন্দন পেলেন প্রতিপক্ষ ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাছ থেকেও। ওদিকে গ্যালারিতে ইংলিশ দর্শকদের করতালি যেন থামার নয়। সাবেক অধিনায়কের বিশাল এই প্রাপ্তিতে দাঁড়িয়ে গেল গোটা ওভাল। কুকের ব্যাটিংয়ের শুরুর আগপর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে অভিনন্দন জানালেন তারা।

ব্যাটিং প্রতিভা দিয়ে যিনি ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাস করেছেন সমৃদ্ধ, ২২ গজের খেলাকে আলোকিত করেছেন অসাধারণ দক্ষতার, তার শেষ ইনিংসে আবেগের জোয়ারে তো ভাসবেই ওভালে উপস্থিত হওয়া ইংলিশরা। পরিসংখ্যানই বলে দেয় এমন রানমেশিন আর কখনও পায়নি ইংল্যান্ড। ১৬১ টেস্টে ১২ হাজার ৪৭২ রান, গড় ৪৫.৩৫। শুধু ইংল্যান্ড নয়, ৩৩ সেঞ্চুরি ও ৫৭ হাফসেঞ্চুরির মালিককে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

টেস্টের কারণে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দিকে খুব বেশি মনোযোগী ছিলেন না তিনি। তাই ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ৮ বছর কাটালেও খেলেছেন মাত্র ৯২ ম্যাচ, যেখানে ৩৬.৪০ গড়ে রান ৩ হাজার ২০৪। আর ২০০৯ সালে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলা কুক ৪ ম্যাচে করেছেন ৬১ রান।

জাগতিক নিয়মে যার শুরু আছে, তার শেষও আছে। মায়াবী সুরে ক্রিকেটের ২২ গজে পা রাখা কুকও থেমে গেলেন, জীবনের শেষ ইনিংসে খেললেন ১৪৭ রানের ইনিংস। তার ব্যাট থেমে গেলেও সেই সুরের ঝঙ্কার মুগ্ধতা ছড়াবে যুগ যুগান্তর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত