স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২০:১৫

‘ভারতকে সুবিধা দিতে’ এশিয়া কাপের সূচিতে পরিবর্তন, মাশরাফির ক্ষোভ

এশিয়া কাপের সূচি নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগ থেকেই দলগুলোর মধ্যে ছিল আপত্তি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচণ্ড দাবদাহে টানা খেলা। তার মধ্যে দুবাই-আবুধাবি-দুবাই ভ্রমণের ধকল তো আছেই। এবার সমালোচনার মুখে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল নতুন করে সূচি বদলে জন্ম দিয়েছে আবার সমালোচনার।  গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগেই গ্রুপের এক, দুই নম্বর দল ঠিক করে নতুন সূচি দিয়েছে তারা। অভিযোগ ওঠেছে, ভারতকে সুবিধা দিতেই আনা হয়েছে এই পরিবর্তন। আর এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে যাই হোক। নতুন সূচি ভারতের সব খেলা রাখা হয়েছে দুবাইতে। প্রভাবশালী বোর্ড হিসেবে ভারতের চাওয়া ছিল তারা আবুধাবিতে খেলবেই না। তাদের সেই চাওয়া ষোলআনা পূরণ করেছে এসিসি।

আগের সূচি অনুযায়ী কেবল ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হলেই সব ম্যাচ দুবাইতে খেলার সুযোগ পেত ভারত। এখন পাকিস্তানের কাছে হারলেও তাদের গ্রুপের এ-১ ধরে খেলা রাখা হয়েছে দুবাইতে।

তেমনি বাংলাদেশকে বি-২ ধরে করা হয়েছে সূচি। বি-২ এর আগের সূচি অনুযায়ী সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ দুবাইতে। পরের দুই ম্যাচ ২৩ ও ২৬ সেপ্টেম্বর আবুধাবিতে বি-২ হিসেবে খেলবে বাংলাদেশ।

বুধবার সকালে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে অনুশীলন করতে এসে বাংলাদেশ দল জানতে পারে নতুন সূচির খবর। নতুন সূচিতে অর্থহীন হয়ে পড়েছে গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ। এমন খবরে হতাশা জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘সূচি বদল নিয়ে চিন্তা করার সুযোগই পাইনি। তবে অবশ্যই এটা হতাশার। প্রথম থেকেই আমাদের পরিকল্পনায় ছিল যে আমরা যদি শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে হারাতে পারলে আমরা হয়ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাব। এরপর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে গ্রুপ ‘এ’ রানার্স আপ দলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলব সুপার ফোরে। কিন্তু আজকে সকাল থেকে জানতে পারছি, আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতি আর হারি, আমরা ‘বি ২’ হয়ে গেছি। এটা অবশ্যই হতাশার।’

‘আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি এখন…অবশ্যই আন্তর্জাতিক ম্যাচের মূল্য আছে। কিন্তু গ্রুপ ম্যাচ বলেন বা যাই বলেন, একটা নিয়ম থাকে টুর্নামেন্টের। সেই নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছি আমরা। এটাই হতাশার।’

সকালে অনুশীলনে এসে সূচি বদলের খবর শুনে হতবাক হয়ে যায় বাংলাদেশ দল। দলের প্রতিক্রিয়াও হয়েছে সেরকমই, ‘আমার মনে হয় না কেউ ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে। এমনকি একজন পাগলও এটা ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে না। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গ্রুপ স্টেজের আগের দিন শুনছেন যে আপনি গ্রুপে দ্বিতীয়। হয়ত প্রকাশ না করলেও এই সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক ভালো হওয়ার কথা না।’

এভাবে সূচি বদলে দেওয়ায় পরিকল্পনা গড়বড় হয়েছে বাংলাদেশের। তবে এমন নেতিবাচক ইস্যু তৈরি করে দেয় জেদও। এবারও কি তাই হবে? অধিনায়ক বুঝালেন শারীরিক ধকলের বাস্তবতা আসলে ভিন্ন, ‘জেদ বলতে দেখুন, আমরা পর পর ম্যাচ খেলছি কখন। যখন আপনারা মূল ম্যাচে এসে এই গরমে  পর পর ম্যাচ খেলছি।  যে ম্যাচের সবচেয়ে মূল্য আছে (সুপার ফোরের ম্যাচ)। সেখানে আমরা পর পর ম্যাচ খেলছি। আমাদের ত ২৪ জন প্লেয়ার নাই একাদশ পুরো বদল করে নামাবো।’

২০ তারিখ আফগানিস্তানের বিপক্ষে দিবারাত্রীর ম্যাচ খেলতে আবুধাবি যাবে বাংলাদেশ। খেলা শেষে দুবাইতে হোটেলে ফিরতেই পেরিয়ে যাবে মাঝরাত। পরদিনই সুপার ফোরের ম্যাচে খেলতে হবে ভারতের বিপক্ষে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এমন ঝক্কি চিন্তায় ফেলছে বাংলাদেশকে, ‘২০ তারিখে খেলা এবং সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচটাও ২১ তারিখে খেলা। যেমন ধরেন কাল যদি পরে ফিল্ডিং করি এবং এরপরের ম্যাচে প্রথমে ফিল্ডিং করি। তাহলে আমাদের ১০ ঘণ্টাও রিকোভারির টাইম নাই। আর সোয়েটিং রিকোভারি করতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টাও লাগে। ’

‘এটা বলব না যে অজুহাত। তারপরও ভাবছিলাম গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হলে দেখা যাক কোন প্রতিপক্ষকে পাই। এই হিসাব-নিকাশের আর কোন সুযোগ নাই। সব কিছু থেকেই খারাপ জিনিসটাই আমাদের দিকে এসেছে। আসলে এই সিদ্ধান্তটা মানসিকভাবে কতটা প্রভাব ফেলছে এটা নিয়েই আমাদের  কাজ করতে হবে।’

এশিয়া কাপটা খুব হুড়োহুড়ি করেও আয়োজন করা হচ্ছে বলে মত বাংলাদেশ অধিনায়কের,  'অন্তত দ্বিতীয় পর্ব যেভাবে হচ্ছে, বলতেই হবে তাড়াহুড়ো। কালকে থেকে যদি দেখেন, ছয়দিনে চারটি ম্যাচ খেলতে হবে। পরের তিনটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই গরমে ৬ দিনে ৪টি ম্যাচ, আমি নিশ্চিত যে রাজি হবে না কোনো দল। বলতে পারেন সব দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের ব্যাপারটা হলো যে, ২১ তারিখে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তার আগের রাতে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ খেলতে হবে। সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই ম্যাচে আমরা সবাই শারীরিকভাবে শতভাগ থাকতে না পারলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত