নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ অক্টোবর, ২০১৮ ১৭:৩৬

ঘরের ছেলে থেকে দলের ত্রাতা

বঙ্গবন্ধু কাপ

‘যে মাঠে খেলে বড় হয়েছি, সেই মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করতে পারাটা গর্বের। আমার খুব ভালো লাগছে।- লাওসের বিপক্ষে ম্যাচে জয়সূচক গোলটি নিয়ে এমন মন্তব্য বিপুলর। সোমবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তার দেওয়া একমাত্র গোলেই লাওসের বিপক্ষে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ।

এই স্টেডিয়ামেই কেটেছে শৈশব, কৈশোরের অনেকটা। স্টেডিয়ামের কাছের সুবিদবাজারেই বাড়ি। ভাইয়ের সাথে ছোটবেলা থেকেই চলে আসতেন মাঠে। এখানেই বলে লাথি দিতে দিতে হয়ে উঠেছেন ফুটবলার। ঘরের ছেলে এই বিপলু আহমদের গোলেই সোমবার উচ্ছ্বাসে গর্জে উঠলো মাঠে জড়ো হওয়া হাজার পঁচিশেক দর্শক।

এমন উচ্ছ্বাস হবেই না কেনো। সোমবার ম্যাচের প্রথম থেকেই আধিপত্য বিস্তার কেরে খেলেও যে একের পর এক সুযোগ নষ্ট করছিলো বাংলাদেশ। মাঝমাঠ দখলে রেখেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন স্ট্রাইকাররা। জালে বল ছোয়াতে পারছিলেন না। খেলা এগিয়ে যাচ্ছিলো গোল শূণ্য ড্রয়ের দিকে। হতাশ হয়ে পড়া বাড়ির পাশের দর্শকদের আনন্দে ভাসানোর একটা বাড়তি দায় তো থাকতেই পারে ‘লোকাল বয়’ বিপলুর। সেই দায় থেকেই হয়তো ৫৯ মিনেটে দর্শকদের জন্য তিনি এনে দিলেন উৎসবের উপলক্ষ্য। ১৯ বছরের এই তরুণের শট খুঁজে নেয় প্রতিপক্ষের জাল। কেবল এই গোল দেয়াই নয়, পুরো ম্যাচেই দূর্দান্ত খেলেছেন এই উইঙ্গার। তার গতির কাছে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের।

তবে মাঠে গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে নাকানুচুবানি খাওয়ালেও কথাবলায় একেবারেই সপ্রতিভ নন বিপুৃল। এখনও কৈশোরসুলভ লাজুকতা। অবশ্য ফুটবলারের অস্ত্র তো পা, মাথাও কাজে লাগাতে হয়। ভালো ফুটবলার হওয়ার জন্য বাকপটুতা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ  নয়। মঙ্গলবার কথা হয় আগেরদিনের বাংলাদেশের জয়ের নায়কের সাথে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে, দম নিয়ে, কিছুটা প্রমিত আর অনেকটা সিলেটী ভাষা মিলিয়ে শোনান তার ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প।

২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-নেপাল। সেই ম্যাচে স্টেডিয়ামের মিডিয়া বক্সের ভবনের ছাদে ওঠে খেলা দেখেছিলেন সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের কিশোর বিপলু আহমদ। সেদিন  খেলা দেখতে দেখতেই একতদিন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলাদেশ দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। এবার নিজের বেড়ে উঠার মাঠে খেলার স্বপ্নও বাস্তব হয়ে ধরা দিল বিপলুর জন্য। তাও কী পূর্ণতায় ভরা সেই বাস্তবতা! তার একমাত্র গোলেই লাওসের বিপক্ষে জয়ের খরা কাটালো বাংলাদেশ। টিকে রইলো টুর্নামেন্টে। আরও ভালো করে বললে টুর্নামেন্টের জৌলুসটাও টিকিয়ে রাখলো। স্বাগতিকরাই হেরে গেলে জৌলুসের আর কী থাকে!

সোমবার ম্যাচের ৫৯ মিনিটে গোল পেয়েই মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের গ্যালারির দিকে ভূ দৌড়। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে ‘স্যালুট’। কেনো ওই দিকে দৌড়, স্যালুট-ই বা কাকে?
 
বিপলু জানালেন, ‘গ্যালারির ওই কোনেই বসে ছিলেন বাবা, মা, ভাই। আর ছিলেন এলাকার অনেকেই।’ আর্ন্তজাতিক ম্যাচে নিজের প্রথম গোল পেয়েই তাই ছুটলেন স্বজনদের কাছে।

কিছুদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেছিলেন বিপলু। তবে সেই ম্যাচের আন্তর্জাতিক মর্যাদা না থাকায় গোলটি স্বীকৃতি পায়নি। সদ্য সমাপ্ত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো খেললেও গোলের দেখা পাননি। সোমবার ঘরের মাঠের গোলটিই তাই তার প্রথম।

প্রথমদিনেই বাংলাদশকে জয় এনে দিলেন বিপলু। এই টুর্নামেন্টে সিলেটের মাঠে আরেকটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। লোকাল হিরোর কাছে এখানকার দর্শকদের প্রত্যাশা যে আরো অনেকটা বেড়ে যাবে তাতে আর সন্দেহ কী!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত