স্পোর্টস ডেস্ক

২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:০৩

প্রতিপক্ষকে দ্বাদশ হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশের

২৮৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম বলেই ওপেনার লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে যে শঙ্কা জেগেছিল সেটা উড়ে যায় সৌম্য-ইমরুলের ব্যাটে। এই দুজনের দুই সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায়; একই সঙ্গে জিম্বাবুয়েকে আরও একবার হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা।

এনিয়ে ১২ বার ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার টস হেরে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে শন উইলিয়ামেসের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে তুলেছিল ২৮৬ রান।

জবাবে ইমরুল ও সৌম্যর জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ লক্ষ্যে পৌঁছায়। দুজনের জুটিতে দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ২২০ রান এসেছে ১৮০ বলে।

সৌম্য খেলেছেন ৯২ বলে ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

ইমরুল সিরিজ শুরু করেছিলেন ১৪৪ রানের ইনিংস দিয়ে। আগের ম্যাচে করেন ৯০ রান। এবার খেললেন ১১২ বলে ১১৫ রানের ইনিংস। এর মাধ্যমে গড়েছেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের ৩১২ রান ছাড়িয়ে ইমরুল থামলেন ৩৪৯ রানে।

২০১৫ সালের এপ্রিলে, ক্যারিয়ারের দশম ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন সৌম্য। দ্বিতীয়টির দেখা পেলেন ৩৫তম ম্যাচে। সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ৯৪ বলে। এ দিন লাগল মাত্র ৮১ বল। ৯ চার ও ৬ ছক্কার ইনিংস শেষে একটু গড়বড়, সীমানায় ধরা পড়ে ফিরলেন ১১৭ রানে।

সৌম্য-ইমরুলের আউটের পর মুশফিক-মিঠুন জুটির মুশফিকের ছক্কায় শেষ হয় ম্যাচ।

এরআগে ম্যাচের নায়ক ছিলেন উইলিয়ামস। তার সেঞ্চুরিতে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন আশা জাগানিয়া স্কোরে। উইকেটে গিয়েছিলেন তৃতীয় ওভারে। ২ উইকেট হারিয়ে তখন নড়বড়ে জিম্বাবুয়ে। বাকি পুরো সময় উইকেটে থেকে মাঠ ছেড়েছেন হার না মেনে। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে অপরাজিত ১২৯ রানে।

আগেই সিরিজ জিতে যাওয়া বাংলাদেশ এ দিন একাদশে পরিবর্তন আনে তিনটি। ওয়ানডে অভিষেক হয় আরিফুল হকের, একাদশে ফেরেন সৌম্য সরকার ও আবু হায়দার।

নতুন বল হাতে পান আবু হায়দার ও সাইফ উদ্দিন। দুজন শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন জিম্বাবুয়েকে। সাইফের প্রথম আর ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই বোল্ড ওপেসার সিফাস জুয়াও। পরের ওভারে আবু হায়দারের বল স্টাম্পে টেনে আনেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ৬ রানে জিম্বাবুয়ে হারায় ২ উইকেট। প্রথম ৫ ওভারের মধ্যে টানা ২২ বলে কোনো রান নিতে পারেনি তারা।

টেইলর ও উইলিয়ামসের জুটি শুরুর ধাক্কাকে পাত্তাই দেয়নি একদম। সাইফ উদ্দিনের এক ওভারে দুটি চারে পাল্টা আক্রমণের শুরু করেছিলেন উইলিয়ামস। পরে তিনি দায়িত্ব নেন উইকেট আগলে রাখার। টেইলর এগোতে থাকেন দারুণ সব শট খেলে।

দারুণ খেলতে থাকা টেইলর উইকেট নেন অপু। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল স্লগ করতে গিয়ে বল তুলে দিলেন আকাশে। ভাঙল ১৩২ রানের জুটি। আগের ম্যাচে ৭৩ বলে ৭৫ করেছিলেন টেইলর। এবার করলেন ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭২ বলে ৭৫।

ততক্ষণে জিম্বাবুয়ের ড্রেসিং রুম ফিরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই সিকান্দার রাজার ছক্কায় থাকল সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন। ৮৪ রানের জুটি জিম্বাবুয়েকে নিয়ে গেল ৪২ ওভার পেরিয়ে। আগের ম্যাচে ৪৯ রানে আউট হওয়া রাজা এবারও হাতছাড়া করেছেন ফিফটি। অপুর ফুলটসে সীমানায় ক্যাচ দিয়েছেন ৪০ রানে।

জিম্বাবুয়ে দারুণ একটি জুটি পেয়ে যায় এরপরও। উইলিয়ামস রানের গতি বাড়িয়েছেন ততক্ষণে। মাশরাফির পরপর দুই বলে বিশাল দুটি ছক্কা মেরে চমকে দেন পিটার মুর। বাংলাদেশ অধিনায়কের ওই ওভার থেকে আসে ১৯ রান। পঞ্চম উইকেটে ৬২ রানের জুটি আসে মাত্র ৪৩ বলে।

উইলিয়ামস ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১২৪ বলে। অপরাজিত থেকে যান ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১৪৩ বলে ১২৯ রানে।

সৌম্যর সঙ্গে ইমরুলের জুটিটা ২২০ রানের। দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেরও সর্বোচ্চ জুটি। ২৮৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে চট্টগ্রামের মাটিতেও রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ইমরুল সৌম্যকে কেবল সঙ্গই দিয়ে যাননি। এই সিরিজে যে দুর্দান্ত ফর্মে ইমরুল, সেই সঙ্গ দেওয়াটা হলো জিম্বাবুয়ের জন্য ভয়ংকরই। বাংলাদেশের পক্ষে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর ছিল ৩৬৫। বাংলাদেশের পক্ষে যেকোনো টুর্নামেন্টে সেটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তামিমের সংগ্রহ ছিল ৩১২ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৮৬/৫ (মাসাকাদজা ২, জুয়াও ০, টেইলর ৭৫, উইলিয়ামস ১২৯*, রাজা ৪০, মুর ২৮, চিগুম্বুরা ১*; আবু হায়দার ১/৩৯, সাইফ ১/৫১, আরিফুল ০/১৭, মাশরাফি ০/৫৬, সৌম্য ০/১৬, নাজমুল ২/৫৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৪০)।
বাংলাদেশ: ৪২.১ ওভারে ২৮৮/৩ (লিটন ০, ইমরুল ১১৫, সৌম্য ১১৭, মুশফিক ২৮*, মিঠুন ৭*; জার্ভিস ১/৪৭, এনগারাভা ০/৪৪, টিরিপানো ০/৩৩, রাজা ০/৪৭, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ১/৭১, উইলিয়ামস ০/৪৩, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ১/৩)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার
ম্যান অব দা সিরিজ: ইমরুল কায়েস

আপনার মন্তব্য

আলোচিত