সিলেটটুডে স্পোর্টস ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০১৫ ২৩:০১

পাত্তাই পেলো না দক্ষিণ আফ্রিকা, ৯ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষে স্কোরবোর্ড যখন বলছিল ১৭০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের সামনে তখন কী খানিকটা হলেও আশাবাদী হয়েছিলেন হাশিম আমলা? ভেবেছিলেন কী জয়ের জন্যে এটা যথেষ্ট? ভেবেছিলেন কী সিরিজ জিতবেন তিনি?

হাশিম আমলা এসব ভেবেছেন কীনা এসব ভাবার সময় ছিল না বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার আর তামিম ইকবালের। তাদের লক্ষ্য ছিল লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে যাওয়ার! বাংলাদেশ পেরেছেও। কিন্তু কে ভেবেছে এমন একতরফাভাবে?

শেষ কবে ৯ উইকেটের ব্যবধানে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা এটা হয়ত তাদের মনে নাই, তবে হারিয়ে যাওয়া সে স্মৃতিটুকু মনে করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব যখন সৌম্য-তামিমের কাঁধে তখন কী করার করার থাকে হাশিম আমলার!

দলকে জিতিয়ে, সিরিজকে পকেটে পুরে সৌম্য-তামিম যখন উল্লাসে ভাসিয়েছেন পুরো দেশকে তখন সৌম্যের নামের পাশে হয়ত সেঞ্চুরি হয়নি কিন্তু আউট হয়ে যাওয়ার আগে করেছেন ঝকঝকে ৯০, আর তামিমের নামের পাশে হাফ-সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি পাননি সৌম্য, এ ম্যাচে পাননি কিন্তু দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন অসাধারণভাবে। আর তার এ ব্যাটিংয়ে কখনই মনে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জিততে পারে!

সৌম্য-তামিমের ১৫৪ রানের পার্টনারশীপের মধ্যে সৌম্য’র অবদান ছিল ৯০ রান। এ রান করতে তিনি বল খেলেন মাত্র ৭৫ যেখানে ছিল বরাবরের মতো বাউণ্ডারিআধিক্য। চারের মার ছিল ১৩টি আর গ্যালারির কাছাকাছি পৌঁছানো একটা বিশাল ছক্কা!

সৌম্য’র বিদায়ের পর আনুষ্ঠানিকতা সারেন তামিম ইকবাল আর লিটন দাশ। তামিম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৬১ রানে আর লিটন দাশ ৫ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে একমাত্র উইকেটটি নেন ইমরান তাহির।

এর আগে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে পরিণত হয়েছিল সিরিজ নির্ধারণী অলিখিত ফাইনাল হিসেবে। টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে শুরুতেই চেপে ধরে বাংলাদেশ।

বৃষ্টিবিঘ্নিত এ ম্যাচের একদফা ম্যাচ বন্ধ হওয়ার আগে হাঁসফাঁস করতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ করে ২৩ ওভারের ৭৮ রান এবং উইকেট হারায় চারটি।

এরপর আবার ম্যাচ শুরু হলে কমে যায় ১০ ওভার। ম্যাচ নির্ধারিত হয় ৪০ ওভারে। আর নির্ধারিত ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ করে নয় উইকেটে ১৬৮। এক উইকেট হাতে থাকায় ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে সিরিজ জিততে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১৭০!

দলীয় ৫০ রানের মাথায় টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান ডেভিড মিলার এবং জেপি ডুমিনি। মিলার ২৩ রান নিয়ে অপরাজিত। ডুমিনি রয়েছেন ৮ রান নিয়ে।

এর আগে ম্যাচের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই মুস্তাফিজের অসাধারণ বোলিংয়ে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন কুইন্টন ডি কক। আউট হওয়ার আগে ওপেনার ডি ককের ব্যাট থেকে আসে ৭ রান। এরপর সাকিব আল হাসানের অসাধারণ ঘূর্ণিতে ফেরেন ফাফ ডু প্লেসিস।

দলীয় অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই সাকিবের বলে মারতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন প্লেসিস। সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯৯তম উইকেট হিসেবে আউট হওয়ার আগে প্লেসিসের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে মাত্র ৬ রান।

এগারোতম ওভারে রুবেলের করা ‘নো-বল’ থেকে ফ্রি-হিটে ধরা পড়েন আমলা। বারোতম ওভারে সাকিবের বলে তুলে মারতে গিয়ে আবারো ধরা দেন আমলা। তবে, সাব্বিরের হাত ফসকে বল বেড়িয়ে যায়। দুইবার বেঁচে গেলেও সাকিবের বলেই অবশেষে বিদায় নেন হাশিম আমলা। এ উইকেটের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০০তম উইকেটের মালিক হন সাকিব। আমলার ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান।

ইনিংসের ১৬তম ওভারে দলীয় ৫০ রানের মাথায় প্রোটিয়াদের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। মাহমুদুল্লার বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ১৭ রান করা রিলে রুশো।

রুবেল হোসেনের শেষ ওভারে দুই নিয়ে ভেঙে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ। শেষ বলে জেপি ডুমিনিকে ক্যাচে পরিণত করায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নির্ধারিত ৪০ ওভার শেষে নয় উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তোলে সফরকারীরা। বৃষ্টির কারণে ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্দতিতে টাইগারদের টার্গেট দাড়ায় ১৭০।

দলীয় ৩৬ ওভারের প্রথম বলে সাকিবের শিকার হন ফারহান বেহারদিন। পরের ওভারের চুতর্থ বলে কেগিসো রাবাদাকে সরাসরি বোল্ড করেন মুস্তাফিজুর রহমান।

এর আগে মাশরাফি বিন মর্তুজার ২০০তম উইকেটে নিজেদের পঞ্চম উইকেট খোয়ালো দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ৩০ ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশ অধিনায়কের বেল মারতে গিয়ে সাব্বির রহমানের ক্যাচে পরিণত হন ডেভিড মিলার।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে জেপি ডুমিনি করেন ৫১ এবং ডেভিড মিলার করেন ৪৪ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল হাসান নেন ৩ উইকেট। এছাড়াও রুবেল ও মুস্তাফিজ প্রত্যেকে ২টি এবং মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ উভয়েই নেন ১টি করে উইকেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত