স্পোর্টস ডেস্ক

১১ জুন, ২০১৯ ০০:২৯

শ্রীলঙ্কা আর বৃষ্টি- আজ প্রতিপক্ষ দুটি

কাগজে কলমে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। তবে ম্যাচের আগে আরেকটি প্রতিপক্ষ এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সামনে। সেটি ইংল্যান্ডের আবহাওয়া। যা শ্রীলঙ্কা থেকেও শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। সেদেশের আবহাওয়া বলছে, আজ ব্রিষ্টলে বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।

শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দুর্দান্তভাবে বিশ্বকাপযাত্রা করে বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়ে হেরে যায় টাইগাররা। আর সবশেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয় তারা। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের লক্ষ্যের পথে বড় ধাক্কা খায় মাশরাফি-সাকিবরা। যে কারণে জয়ের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে তারা।

এ পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা। এ ম্যাচে জয় ভিন্ন কিছু ভাবছে না টাইগাররা। জয় পেতে ক্ষুধার্ত তারা। কারণ, সেমিফাইনালে খেলার রেসে টিকে থাকতে হলে ম্যাচটি জিততেই হবে তাদের। বিস্ট্রলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে দুই দলের লড়াই।

এবার সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ। শুরুটা সেরকমই ছিল। লন্ডনের বিখ্যাত ভেন্যু কেনিংটন ওভালে শক্তিশলী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করে টাইগাররা। পরের ম্যাচে একই ভেন্যুতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় তারা। দুর্দান্ত লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হেরে যায় মাশরাফি-সাকিবরা। ২ উইকেটের হারে টুর্নামেন্টে প্রথম ধাক্কা খায় তারা।

এরপর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফের পয়মন্ত ভেন্যুতে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ইংলিশদের মুখোমুখি হওয়ার আগে সেখানে দুটি ম্যাচ খেলে শতভাগ জয় পায় টাইগাররা। এছাড়া বিশ্বকাপের মঞ্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার খেলে দুটিতেই জয়ের রেকর্ড ছিল তাদের। তাই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসীই ছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় তারা।

ওই ম্যাচে হেরে কিছুটা ব্যাকফুটে থাকা টাইগারদের জন্য আজ অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় তুলে উজ্জ্বীবিত হওয়ার দারুণ সুযোগ এসেছে। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি তা ভণ্ডুল করে দেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইংল্যান্ডে তিনটি জিনিসের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওয়েদার, ওমেন, ওয়ার্ক। ইংলিশরা সহজে বোঝাতে এটিকে বলে ‘থ্রি ডব্লিউ’। এখানে মানুষের চাকরি বদলায় হুট করেই, মেয়েদের বয়ফ্রেন্ডের ক্ষেত্রেও তাই! সবচেয়ে বেশি বদল ঘটে আবহাওয়ার। হুটহাট চলে রোদ-বৃষ্টির খেলা।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে দাপট দেখাবে বৃষ্টি। তার কিছুটা নমুনা দেখা গেছে ম্যাচের আগেরদিন সোমবার ভেন্যুতে পা রাখতেই। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর ঠাণ্ডা বাতাসের মাঝেই অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। দুপুরে শ্রীলঙ্কা দল অনুশীলনে নামার পর শুরু হয় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। মঙ্গলবার ম্যাচের দিন বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা আরও বেশি, ৯০ শতাংশ।

নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ব্রিস্টলে আসা বাংলাদেশ দলের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন বৃষ্টি। এই মাঠেই পাকিস্তানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের জন্যও তাই প্রতিপক্ষ বেরসিক বৃষ্টিই।

শ্রীলঙ্কা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে। দলটির বিপক্ষে নিকট অতীতে টাইগাররা পেয়েছে অসাধারণ সব সাফল্য। বিশ্বকাপেও লঙ্কানদের হারানোর ছক কষেছে মাশরাফী বিন মোর্তজার দল। অধিনায়ক তাইতো খুব করে চাইছেন খেলাটা হোক।

বৃষ্টির শঙ্কা প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ম্যাচটা না হলে আমাদের জন্য সমীকরণ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। ম্যাচটা অবশ্যই হওয়া খুবই প্রয়োজন। শেষ দুটি ম্যাচের একটিতে জিততে পারলে অনেক বেশি প্রয়োজন নাও হতে পারত। কিন্তু এখন খুবই প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই চাচ্ছি ম্যাচটা যেন হয়।

বাংলাদেশের প্রথম তিনটি ম্যাচ ছিল এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, যারা ইংলিশ কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত। টাইগারদের চতুর্থ ম্যাচের প্রতিপক্ষ উপমহাদেশের দল শ্রীলঙ্কা। কন্ডিশন বোঝায় তাই এক কাতারে দল দুটি। এটিতে অবশ্য আলাদা করে স্বস্তির আবহ নেই। মাশরাফি ভালো করেই জানেন জিততে হলে খেলতে হবে সেরা ক্রিকেটটাই।

 অধিনায়ক বলেন, বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম থেকেই এটা (শ্রীলঙ্কা) আমরা হিসাব-নিকাশে রেখেছি। প্রথম তিনটি ম্যাচ এমন টিমের সঙ্গে খেলেছি যারা শুরু থেকেই সেট। আমাদের হয়ত আরেকটু সময় লাগবে।

‘প্রথম ম্যাচ জেতায় মনে হয়েছে আরেকটা ম্যাচ জিতে যদি বের হয়ে যেতে পারি তাহলে আমাদের জন্য সমীকরণ (সেমিফাইনাল) হয়ত খুব সহজ হবে। দুর্ভাগ্য আমরা পারিনি, কেউ কেউ সেরা জায়গায় সেরাটা দিতে পারিনি। এশিয়ার দুইটা দেশ যখন খেলছি, দুই দলই ভাবছে এখান থেকে হয়ত ২ পয়েন্ট নিতে পারি। এটা সত্যি সমান অবস্থায় দুটি দল আছে। দিনশেষে যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে।’- যোগ করেন মাশরাফি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই ম্যাচটির ভেন্যুতে ৯ বছর পর টাইগাররা আবার যখন খেলতে নামছে, তখন একদমই ভিন্ন চ্যালেঞ্জ- বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত