ক্রীড়া প্রতিবেদক

০৫ জুলাই, ২০১৯ ০১:৩৭

শেষ ম্যাচের আগে মাশরাফিকে নিয়ে গুঞ্জন

এই বিশ্বকাপে একদমই নিজের চেনা রূপে ছিলেন না মাশরাফি বিন মর্তুজা। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি মোটেই। ৭ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন মাত্র একটি। বোলিয়ে নেই নিয়ন্ত্রণ। ইকোনোমে রেটও খুব বাজে।

দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ দলের প্রধান পেসারে দায়িত্ব পালন করা মাশরফির কাছে এমন হতশ্রী বোলিং আশাহত করেছে সকলে। কিন্তু দু'একটা সিরিজে এমন বাজে সময় তো যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই আসতে পারে। বাজে সময়ে ক্রিকেটাররা সমালোচিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাশরাফিকে নিয়ে যেনো একটু বেশিই সমালোচনা হচ্ছে।

বাংলাদেশ দলকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য যাকে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দেওয়া হয়, নেতত্বগুণের কারণে যিনি মাঠে ও মাঠের বাইরে নেতা হয়ে ওঠেছেন, নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আর অসংখ্য ইনজুরি নিয়ে যিনি এখন পর্যন্ত খেলে যাচ্ছেন- সেই মশরাফিকে নিয়ে এমন সমালোচনা ছিলো অনভ্রিপেতোই।

সেমিফাইনালে না উঠতে পারলেও বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুব একটা নাজুক নয়। বরং লড়াকু মানসিকতার কারণে ক্রিকেটবোদ্ধাদের সমীহই আদায় করে নিয়েছে মাশরাফিবাহিনী। অথচ দল হারলেই সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হচ্ছে মাশরাফিকে। এই সমালোচনা এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে আজ (শুক্রবার) পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে মাশরাফি খেলবেন কী না এই নিয়েই গুঞ্জন দেখা দিয়েছে।

এমন গুঞ্জনকে উসকে দিয়েছে ম্যাচের আগে বৃহস্পতিবার মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনে না আসা ও সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলার বিরল চিত্র। এমনকি ম্যাচের আগেরদিন বৃহস্পতিবার অনুশীলনও করেননি মাশরাফি।

সাংবাদিকদের সাথে মামলাফির সবসময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই বিশ্বকাপেও তার ব্যতয় ঘটেনি। বিশ্বকাপের নিরাপত্তার কড়াকড়ি আর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যেও প্রতি ম্যাচের আগেরদিন যিনি অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট মিনিট স্বদেশী সাংবাদিকদের সাথে একান্তে আড্ডা দিয়েছেন। খুনসুটি করেছেন। সেটা আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচের আগের দিনও করেছেন। সেদিনও কিন্তু মাশরাফি প্রেস কনফারেন্সে কথা বলতে আসেননি। অথচ বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সাথে আড্ডাটা ঠিকই ছিল।

সেই মাশরাফি বৃহস্পতিবার প্রেস কনফারেন্সেও আসলেন না। সাংবাদিকদের সাথে অন্য দিনের মত জমজমাট আড্ডাও হলো না। একটু বৈসাদৃশ্য ঠেকছে বৈকি। প্রাণখোলা, মিশুক, আলাপি আর আড্ডাপ্রিয় মাশরাফির আজকে নিজেকে খোলসবন্দী করে ফেলা, তাই নানা কৌতুহলি প্রশ্ন, গুঞ্জন, ফিসফাসের জন্ম দিয়েছে।

শুধু সাংবাদিকের সাথেই নয়। টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রেও জানা গেছে, অন্য দিনের চেয়ে মাশরাফি একটু কম কথা বলেছেন। বাড়তি আবেগ তাকে আচ্ছন্ন করতে না পারলেও একটু ধীরস্থির মনে হয়েছে তাকে। অন্য দিনের মত গল্প-আড্ডায় মেতেও উঠেছেন কম।

কেমন এমন হলো? মাশরাফি হঠাৎ নিজেকে খোলসবন্দী করলেন কেন? তবে কি কাল কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? আগের মত বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটবেন না তো? সেই ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিলের মত অবসরের ঘোষণা (টি-টোয়েন্টিতে) দিয়ে বসবেন না তো আবার?

মনে আছে, দু’বছর আগে ৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার আগে বলেছিলেন, ৬ এপ্রিলই হবে আমার শেষ টি টোয়েন্টি ম্যাচ। হুট করে কাল অবসরের ঘোষণাটাও দিয়ে বসবেন নাতো? অনেকেই এমনটাই ভাবছেন; কিন্তু ভিতরের খবর, মাশরাফি এবার আর এমন কিছু করবেন না।

আর করার কারণও নেই। কারণ তিনি তো আগে ভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন, খেলা চালিয়ে যাবেন। হয়তো দেশের মাটিতে নিজের শেকড়ে অগণিত ভক্ত-সুহৃদদের সামনে ঘটা করে অবসর নেবেন।

কিন্ত সেটাই শেষ কথা নয়। আরও কথা আছে। হঠাৎ লর্ডসের বাতাসে অন্য রকম গুঞ্জন! মাশরাফি কি আজ পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচটা খেলবেন? এমন একটি প্রশ্ন, গুঞ্জন হঠাৎ করেই লর্ডসের বাতাসে ভেসে বেড়ালো।

কিন্তু সে গুঞ্জনের সত্যতা কতটা? মাশরাফি সত্যিই ৫ জুলাই পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচ খেলবেন না? ভারতের সাথে ২ জুলাই বার্মিংহামের এজবাস্টনে হওয়া ম্যাচটিই তাহলে তার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ হয়ে গেছে?

এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছেই। যে ম্যাচকে ভাবা হচ্ছে, বিশ্বকাপে তার শেষ ম্যাচ, পাকিস্তানের সাথে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচটি খেলবেন না মাশরাফি!

মাশরাফি আসলে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়েই বিশ্বকাপ খেলেছেন। নিজে কখনো হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির ধরণ সম্পর্কে প্রকাশ্যে একটি কথা না বললেও ভিতরের খবর, তার হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কিন্তু একদম ছোট-খাট নয়।

কিন্তু মাশরাফি সেই ইনজুরি নিয়ে খেলে যাচ্ছেন। যে কারণে বিশ্বকাপে বলের ধারও গেছে কমে। যেহেতু পাকিস্তানের সাথে ম্যাচটি গুরুত্ব হারিয়েছে। এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তাই মাশরাফি শেষ ম্যাচে নাকি বিশ্রামে থাকার চিন্তা ভাবনা করছেন, এমনটিও শোনা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অধিনায়ক আর বোলার মাশরাফির যে অবদান, বিভিন্ন সাফল্যে তার যে বল হাতে অগ্রণী ভূমিকা- সেটা কি সাত ম্যাচে একটি মাত্র উইকেট পাওয়ায় ধুয়ে মুছে গেছে?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত