স্পোর্টস ডেস্ক

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:৪০

টিকে থাকতে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামছে জিম্বাবুয়ে

একপাশে নেটে নাঈম শেখ, অন্যপাশে নাজমুল হোসেন শান্ত। নাঈমের নেটে বোলিং করছিলেন লেগ স্পিনার হিসেবে সুযোগ পাওয়া আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। তিনজনকেই পাখির চোখে পরখ করেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। লিটনের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে কে খেলবেন, তারই যেন পরীক্ষা হয়ে গেলো আধাঘণ্টার নেট সেশনে।

ব্যাটসম্যান ছাড়াও এদের মাঝে পরীক্ষা অবশ্য আরেকজন দিয়েছেন, যিনি বয়সভিত্তিক দলে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন একজন লেগ স্পিনার হিসেবে। তিনি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। সবমিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগে একাদশ গঠন নিয়ে ড্রেস রিহার্সেল হয়ে গেলো প্রথম দিনের অনুশীলনে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে আত্মবিশ্বাস তলানিতে থাকা বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ে ফিরতে খুব মরিয়া।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে দুই দল মুখোমুখি হবে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও বিটিভি।

আফগানিস্তানের কাছে হারের ক্ষত নিয়েই চট্টগ্রামে পা রেখেছে বাংলাদেশ। ঢাকার ওই হারের দুঃখ ভুলে চট্টগ্রামে ঝলমলে শুরুর অপেক্ষায় সাকিব-মুশফিকরা। চট্টগ্রাম স্কোয়াডে নতুন সুযোগ পাওয়া বেশ কয়েকজনের সুযোগ মিলতে পারে একাদশে। আফগানিস্তান ম্যাচে মুশফিকুর রহিমকে ওপেনিংয়ে নামানোর সিদ্ধান্ত কাজে আসেনি। ফলে আবারও হয়তো মিডল অর্ডারে ফিরে যাবেন তিনি।

তবে ওপেনিংয়ে যে নতুন একজনের সুযোগ আসছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। কে সে? ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা নাজমুল নাকি সদ্যই বয়সভিত্তিকি ক্রিকেট পেরিয়ে আসা নাঈম শেখ। বাংলাদেশ ইমার্জিং একাদশের হয়ে শান্ত কিছুদিন আগে ৭৭, ১৩৩ এবং ৮৮* রানের ঝলমলে তিনটি ইনিংস খেলে এসেছেন। অন্যদিকে নাঈম সম্প্রতি ভালো না খেললেও প্রতিভাবান হিসেবে দলে সুযোগ পেয়েছেন।

মঙ্গলবারের অনুশীলনে এই দুইজনকে পাখির চোখে পরখ করেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। শেষ পর্যন্ত একাদশে কে থাকবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। নেটে অবশ্য বেশিরভাগ সময়টাতেই অস্বস্তি নিয়েছিলেন নাঈম। তিনি শুরুতে খেলেন স্পিনারদের বিপক্ষে। তাকে বল ছোঁড়েন তাইজুল, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নবাগত আমিনুল। নাঈম ও আমিনুলের অনুশীলন পর্ব খুব কাছ থেকে দেখেছেন হেড কোচ। ছিলেন ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জিও। তবে তারা যে খুশি হতে পারেননি তা বোঝা যাচ্ছিল মুখভঙ্গি দেখে।

অন্যদিকে নাজমুল হোসেন শান্ত সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। সবমিলিয়ে ম্যাচের আগের দিনের পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকটাই এগিয়ে তিনি। তবে চমক হিসেবে নাঈমকে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গত জুলাইতে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বেশ কিছু ভালো ইনিংস খেলেছেন নাঈম। এরমধ্যে বিকেএসপিতে ১২৬ রানের একটি ইনিংস আছে।

চট্টগ্রামে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ। এছাড়া ১৫ দলের জনে একজন লেগ স্পিনারকে দলে নিয়েছে বিসিবি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও লেগ স্পিনও করতে পারেন ১৯ বছর বয়সী বিপ্লব। অনুশীলনে টানা বোলিং করেছেন। প্রধান কোচের নাকি মনে ধরেছে তার বোলিং! তবে একেবারে আনাড়ি এই লেগ স্পিনারকে নেওয়াটা কতোটা যৌক্তিক হবে সে বিষয়ে টিম মিটিংয়ে আলোচনা হবে। সেই আলোচনার ওপর নির্ভর করছে একাদশে বিপ্লবের থাকা কিংবা না থাকা! সবমিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একাদশটি নিয়ে বেশ বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

আগের ম্যাচে হেরে যাওয়ায় এখন যে কোন মূল্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করতে মরিয়া স্বাগতিকরা। তবে সেটা নিশ্চিত করতে হলে দলের টপ অর্ডারকে ভালো ইনিংস খেলতে হবে, সেই সঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে মিডল অর্ডারকেও। আশার কথা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তা যথেষ্ট নয়। তাকে ঠিক আগের সেই ‘ফিনিশার’ মনে হয়নি একবারের জন্যও। বড় দুশ্চিন্তা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়েই। এখন পর্যন্ত তাকে ব্যাট কিংবা বল হাতে চেনা রূপে দেখা যায়নি।

এদিকে বোলিংয়ে শুরুটা ভালো করেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছেন না বোলাররা। সাইফউদ্দিন-তাইজুল-মোস্তাফিজ থেকে শুরু করে সবাই শেষ দিকে খেই হারিয়ে ফেলছেন। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা সাকিবের বোলিং নিয়ে। আগের ম্যাচে অবশ্য ভালো করেছেন। ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়ের অবস্থা মোটামুটি ভালো হলেও বড় দলের মতো হয়নি কোন ম্যাচেই। তাইতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘাম ঝরিয়ে জয় এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অবশ্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের গ্লানি ভুলে জয়ের প্রত্যাশা করছেন, ‘প্রতিটি ম্যাচ জেতার জন্য মাঠে নামি। এই মুহূর্তে আমাদের সামনে তিনটি ম্যাচ। যার প্রতিটিতেই আমরা জিততে চাই। আশা করি জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে আজই ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারবো। ‘

অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো বাজে অবস্থা জিম্বাবুয়ের। ছন্নছাড়া বোলিং আক্রমণ জিম্বাবুয়েকে পিছিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতে শেষ দিকে বোলারদের ব্যর্থতায় ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে তারা। কাইল জার্ভিস ও টেন্ডাই চাতারা উইকেট পেলেও রান খরচ করেছেন ওভার পিছু ১০.৫০ করে। আইনস্লে লভু এবং নেভিল মাদজিভাও ছিলেন খরুচে। শন উইলিয়ামস ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও চলতি সিরিজে ৬.৭১ ইকোনমি রেট নিয়ে বল হাতে দলের সেরা। সব ভুল শুধরে তাই জয়ে ফিরতে মরিয়া জিম্বাবুয়েও।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত