স্পোর্টস ডেস্ক

২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১৮:১৩

সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেনি আইসিসি: ক্রিকইনফো

দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসি এখনও কোন অভিযোগ দায়ের করেনি, এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএনক্রিকইনফো।

ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিক্সিং প্রস্তাব পাওয়ার পরও সেই বিষয়ে কেন আইসিসিকে জানানো হয়নি- এই বিষয়ে নিয়ে এখনো তদন্ত করছে আকসু। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাকিবের বিপক্ষে কোনো অভিযোগই গঠন করেনি আইসিসি।

আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টে বলা আছে, বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে। না হয় আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা- আকসুকে অবহিত করতে হবে। সে খবর নিজে লুকিয়ে রাখলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সাকিব তার কোনোটাই করেননি। এই কারণেই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এসেছে নতুন দুঃসংবাদ। বলা হচ্ছে, সম্ভবত আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থার রায়ে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব। তার বিরুদ্ধে জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ পেয়েও নিশ্চুপ থেকেছেন তিনি।

ক্রিকইনফোর পক্ষ থেকে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আকসু কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আইসিসি কিংবা আকসু- কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। আইসিসি এবং আকসুর নীতি হচ্ছে, তদন্তাধীন কোনো বিষয় সম্পর্কে একটা উপসংহারে না আসা পর্যন্ত ওই বিষয়ে কোনো মন্তব্য কিংবা কোনো কথা বলবে না।

প্রটোকল অনুযায়ী, তদন্ত শেষে আকসু তার ফাইনাল রিপোর্ট আইসিসির সিনিয়র-মোস্ট লিগ্যাল কাউন্সিলের সদস্যকে পাঠায়, এরপর সেই সদস্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি শাস্তি দিয়ে সামনে এগুবেন নাকি শাস্তি দেবেন না। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি দোষ স্বীকার করবেন নাকি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করবেন। যদি তিনি তার অভিযোগকে গ্রহণ করেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনসম্মুখে প্রকাশের আগে তা অনুমোদনের বিষয়েও একমত হতে হয়।

ক্রিকইনফো জানিয়েছে, যদি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে পুনরায় রায় দেয়ার জন্যে একটি স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এমনকি এমনও ঘটতে দেখা গেছে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে; কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি আর চ্যালেঞ্জ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কান সনাথ জয়াসুরিয়ার বিষয়টা উল্লেখ করা যায়। যার বিরুদ্ধে আকসু অভিযোগ গঠন করেছিল। তিনি প্রথমে চ্যালেঞ্জ করার ফলে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়াসুরিয়া আকসু নীতির অধীনে কোনো এক অপরাধ করেছেন বলে স্বীকারও করেছিলেন।

সাকিবের বিষয়টি নিয়ে উত্তাল ক্রিকেটপাড়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিবের শাস্তি হয়ে গেছে বলে ছড়িয়ে পড়েছে নানা কথা। বলা হচ্ছে, সাকিব আবেদন করলে, শাস্তি কমানোও হতে পারে। এই সংবাদটি প্রথমে প্রকাশ করে দৈনিক সমকাল। এনিয়ে দিনভর চলে আলোচনা।

দৈনিক সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেটি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে গোপন করেন তিনি। বিষয়টি পরে আইসিসি জানতে পারে। আর এতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছেন তিনি। আইসিসি ইতোমধ্যে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে। তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন না করার নির্দেশনাও দিয়েছে আইসিসি। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাকিব। গতকাল সোমবার বিসিবির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিব পরবর্তী সময়ে আকসুকে সহায়তা করায় একটু নমনীয় তারা। শাস্তি ১৮ মাস নির্ধারণ করা হলেও সাকিব আপিল করলে সেটা কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিসিবির সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সাকিব আইসিসির কাছেও ক্ষমা চেয়ে শাস্তি মওকুফের আবেদন করবেন। আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চললে এই শাস্তি ছয় মাসে নেমে আসতে পারে। এটাই এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি।

উল্লেখ্য, দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের স্বার্থে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে সাকিবের নেতৃত্ব দেওয়া, বিসিবিকে না জানিয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে সাকিবের বাণিজ্যিক চুক্তি, এবং ভারত সফরের আগে অনুশীলনে যোগ না দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাকিবের ভারত সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা সম্পর্কে একাধিক মন্তব্যের সময়ে সমকাল এমন সংবাদ প্রকাশ করল। পত্রিকাটি জানায়, সাকিব নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে তার পাশে থাকবে বিসিবি। যদিও এরআগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ইস্যুতে ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, "ম্যাচ ফিক্সিংয়ের খবর আসতেছে,আপনারা চিন্তা কইরেন না, ওইগুলা আসতেছে।"

এদিকে, সাকিবের নিষেধাজ্ঞার সংবাদ গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের পর এনিয়ে কথা বলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তারা প্রত্যেকেই সাকিবের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত