স্পোর্টস ডেস্ক

৩০ অক্টোবর, ২০১৯ ২৩:৫১

কে এই দীপক আগারওয়াল?

নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর কথা বলছেন সাকিব আল হাসান, পাশে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন

বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়ে সেটা কাউকে না জানানোর কারণে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন। দীপক আগারওয়াল নামের এক ভারতীয় জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি, তবে তিনি সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।

সাকিবকে শাস্তি দিতে গিয়ে আইসিসি এমনই জানিয়েছে। আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালায় কোনো জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পাওয়ার পর তা জায়গা মতো না জানানো বড় অপরাধই। সে অপরাধেই তাকে ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে এক বছর (নিষেধাজ্ঞা দুই বছরের, এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা)।

দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাকে যে জুয়াড়ি ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপ বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যক্তির নাম দীপক আগারওয়াল, একজন কুখ্যাত জুয়াড়ি। অনেক দিন ধরেই সে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কড়া নজরদারির মধ্যে আছে।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, এই জুয়াড়ি ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও নজরদারির বাইরে নন। আইপিএলসহ বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে স্পট ফিক্সিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আছে।

২০১৭ সালে ভারতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দুই সহযোগীসহ বেশ কিছু দিন জেলে থাকার পর সে বেরিয়ে আসে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকার কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে সে।

২০১৭ সালেই (নভেম্বর মাসে) একজন পরিচিতজনের কাছ থেকে সাকিবের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাকে প্রথম ফোন দেয় আগারওয়াল। ওই সময় বাংলাদেশে চলছে বিপিএলের আসর। এরপর আরও দুইবার সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। সাকিব এই যোগাযোগের বিষয়টিই নিয়মানুযায়ী আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে গোপন করেছিলেন।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যমেও তাকে বর্ণনা করা হচ্ছে একজন 'ব্ল্যাকলিস্টেড' বা কালো তালিকাভুক্ত বুকি হিসেবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) অবশ্য এই ব্যক্তিকে শুধু একজন 'পার্সন অব ইন্টারেস্ট' বলে বর্ণনা করছে।

বিসিসিআই-এর দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান অজিত সিং শেখাওয়াত তার সম্পর্কে এভাবেই কথা বলেছেন। দীপক আগরওয়াল প্রসঙ্গে শেখাওয়াত বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ইনি ব্ল্যাকলিস্টেড কি না বলতে পারব না, মিডিয়া তো অনেক ধরনের শব্দই ব্যবহার করে। তবে আমাদের ভাষায় তিনি একজন 'পার্সন অব ইন্টারেস্ট'।"

"মানে কিছু লোকজন এই খেলাটাকে সাবভার্ট বা হেয় করার চেষ্টা করে থাকে, ইনি তাদেরই একজন।"

"আমরা তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার চেষ্টা করি, খেলোয়াড়রা যাতে এদের সঙ্গে না-মেশে সে ব্যাপারে সাবধান করে দেই।"

"তবে শেষ পর্যন্ত আমরা তো আর পুলিশ নই, ফলে এর চেয়ে বেশি কিছু করার থাকে না," বলেন শেখাওয়াত, যিনি কর্মজীবনে অবসর নিয়েছেন রাজস্থান পুলিশের মহাপরিচালক হিসেবে।

এদিকে, 'ক্রিকেট বুকি' দীপক আগরওয়ালের সম্বন্ধে খোঁজখবর করতে গিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে অন্তত দুটি ঘটনার খোঁজ পেয়েছে বলে জানিয়েছে- যার দুটিতেই অভিযুক্তের নাম দীপক আগরওয়াল।

প্রথম ঘটনায় ২০১১ সালে রাজস্থানের উদয়পুর শহরের ঘন্টাঘর এলাকায় বিজয় কুমার নামে এক উঠতি ক্রিকেটার ক্রিকেট বেটিং চক্রে জড়িয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। নিজের সুইসাইড নোটে তিনি নিজের এই পরিণতির জন্য দায়ী করে গিয়েছিলেন দীপক আগরওয়ালকে।

তিনি অভিযোগ করেছিলেন, দীপকই না কি তাকে ক্রিকেট জুয়ার চক্রে টেনে এনেছিলেন।

উদয়পুর শহরের পুলিশ কর্মকর্তাও তখন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, দীপক আগরওয়ালের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ রুপি আদায় করে তার পরিবারকে দেওয়ার জন্য সুইসাইড নোটে অনুরোধ করে গেছেন নিহত ওই যুবক।

দ্বিতীয় ঘটনায় ২০১৭ সালে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের পুলিশ ক্রিকেটের স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়গড় শহরে জনৈক দীপক আগরওয়ালকে গ্রেপ্তার করে। সেই ঘটনায় দুই সঙ্গী সমেত দীপক আগরওয়ালকে জেলেও যেতে হয়, তবে কিছুদিনের ভেতরই তিনি ছাড়া পেয়ে যান।

তবে এই দুটি ঘটনায় জড়িত দীপক আগরওয়াল আর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এক্সচেঞ্জে জড়িয়ে পড়া দীপক আগরওয়াল একই ব্যক্তি কি না, তা নিশ্চিতভাবে এখনও বলা যাচ্ছে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত