সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ ০১:৫৪

‘ভারতীয় জুয়াড়িরা’ ক্রিকেটের জন্যে কতটা বিপদ?

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দীপক আগারওয়াল নামের এক ভারতীয় জুয়াড়ির ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সাকিব সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তবে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তিনি আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডেও রিপোর্ট করেননি। এই গোপনীয়তার কারণে তাকে শাস্তি দিয়েছে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালায় কোনো জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পাওয়ার পর তা জায়গা মতো না জানানো বড় অপরাধই। সে অপরাধেই তাকে ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে এক বছর (নিষেধাজ্ঞা দুই বছরের, এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা)।

দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাকে যে জুয়াড়ি ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপ বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যক্তির নাম দীপক আগারওয়াল, একজন জুয়াড়ি। অনেক দিন ধরেই সে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কড়া নজরদারির মধ্যে আছে।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ে ভারতীয় জুয়াড়িদের নাম নতুন আসেনি। এরআগেও একাধিকবার এসেছে তাদের নাম। তাদের অনৈতিক প্রস্তাবে অনেক ক্রিকেটার সাড়া দিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন। তবে সাকিব এক্ষেত্রে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তবে তিনি বিষয়টি গোপন করেছিলেন বলে আইসিসি তাকে শাস্তি দিয়েছে।

এরআগে, ২০০০ সালে দিল্লি পুলিশের আসা একটি টেপ থেকে উদ্ধার হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে আর ভারতীয় একজন বুকমেকার সঞ্জয় চাওলার মধ্যে গোপন কথাবার্তা।

সেই তদন্তের সূত্র ধরেই হ্যান্সি ক্রোনিয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ পরে প্রমাণিত হয়। ক্রোনিয়ে নিজের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হন।

সঞ্জয় চাওলা ছিলেন লন্ডন-প্রবাসী একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেট জুয়াড়ি। তিনি ও ভারতে তার সঙ্গী রাজেশ কালরা মিলেই ক্রোনিয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা দলের আরও কিছু ক্রিকেটারকে ফিক্সিংয়ে টেনে এনেছিলেন।

এর কিছুদিন পরেই ভারতীয় দলের তৎকালীন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতীয় বোর্ড।

অজয় জাদেজা, মনোজ প্রভাকর, নয়ন মোঙ্গিয়াসহ আরও কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারের ওপরও শাস্তি নেমে আসে।

আজহারউদ্দিনসহ এই তারকাদেরও ক্রিকেট বেটিং জগতের সঙ্গে যোগসূত্র ছিলেন মুকেশ গুপ্তা নামে একজন ক্রিকেট জুয়াড়ি।

দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা মুকেশ গুপ্তা 'জন' বা 'এমকে' নামেও পরিচিত ছিলেন। পারিবারিকভাবে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা থাকলেও ক্রিকেট বেটিংয়ের মারফত তিনি বিপুল অর্থসম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

দিল্লি-মুম্বাই-লন্ডনের ভারতীয় কিংবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেট জুয়াড়িরাই বিশ্ব ক্রিকেটে বড় বড় তারকাকে বারবার বিপদে ফেলেছেন- সেই তালিকায় দীপক আগারওয়াল হলেন সবশেষ সংযোজন।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, এই জুয়াড়ি ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও নজরদারির বাইরে নন। আইপিএলসহ বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে স্পট ফিক্সিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আছে।

২০১৭ সালে ভারতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দুই সহযোগীসহ বেশ কিছু দিন জেলে থাকার পর সে বেরিয়ে আসে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকার কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে সে।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যমেও তাকে বর্ণনা করা হচ্ছে একজন 'ব্ল্যাকলিস্টেড' বা কালো তালিকাভুক্ত জুয়াড়ি হিসেবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) অবশ্য এই ব্যক্তিকে শুধু একজন 'পার্সন অব ইন্টারেস্ট' বলে বর্ণনা করছে।

২০১১ সালে রাজস্থানের উদয়পুর শহরের ঘন্টাঘর এলাকায় বিজয় কুমার নামে এক উঠতি ক্রিকেটার ক্রিকেট বেটিং চক্রে জড়িয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। নিজের সুইসাইড নোটে তিনি নিজের এই পরিণতির জন্য দায়ী করে গিয়েছিলেন দীপক আগারওয়ালকে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, দীপকই না কি তাকে ক্রিকেট জুয়ার চক্রে টেনে এনেছিলেন।

উদয়পুর শহরের পুলিশ কর্মকর্তাও তখন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, দীপক আগারওয়ালের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ রুপি আদায় করে তার পরিবারকে দেওয়ার জন্য সুইসাইড নোটে অনুরোধ করে গেছেন নিহত ওই যুবক।

দ্বিতীয় ঘটনায় ২০১৭ সালে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের পুলিশ ক্রিকেটের স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়গড় শহরে জনৈক দীপক আগরওয়ালকে গ্রেপ্তার করে। সেই ঘটনায় দুই সঙ্গী সমেত দীপক আগরওয়ালকে জেলেও যেতে হয়, তবে কিছুদিনের ভেতরই তিনি ছাড়া পেয়ে যান।

তবে এই দুটি ঘটনায় জড়িত দীপক আগারওয়াল আর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এক্সচেঞ্জে জড়িয়ে পড়া দীপক আগরওয়াল একই ব্যক্তি কি না, তা নিশ্চিতভাবে এখনও বলা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) প্রধান অজিত সিং শেখাওয়াত বলেন, "বিশ্ব ক্রিকেটকে এই 'ভারতীয়' জুয়াড়িরা কলুষিত করছে কি না সেটা আইসিসিই ভাল বলতে পারবে। তবে হ্যাঁ, আমাদের জন্যও এই জুয়াড়িরা বিরাট মাথাব্যথা কোনও সন্দেহ নেই- এদের ওপর সব সময় আমাদের নজর রাখতে হয়, অ্যালার্ট থাকতে হয়।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত