স্পোর্টস ডেস্ক

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ ১৩:০৪

সাকিবের মতো ভুল করেননি আফিফ

২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুয়াড়ি দীপক আগরওয়ালের নিয়মিত বার্তা আদান-প্রদানের একই সময়ে জাতীয় দলের আরও কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এমনকি জুয়াড়িরা লক্ষ্য বানিয়েছিলেন এক তরুণ খেলোয়াড়কেও।

তখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলা আফিফ হোসেন অবশ্য দেশের সবচেয়ে বড় তারকার মতো ভুল করেননি। বার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ম মেনে তা জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেও।

দ্রুত বিষয়টি জানানোর জন্য সে সময় ক্রিকেট প্রশাসনের শীর্ষ মহলেও বেশ প্রশংসিত হওয়া এই তরুণ ক্রিকেটার তখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলতে অবস্থান করছিলেন নিউজিল্যান্ডে। সেখানে ১৩ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সময়ই একদিন নিজের ই-মেইল চেক করতে গিয়ে অচেনা এক ঠিকানায় চোখ আটকে যায় তার। যদিও শুরুতে ‘স্প্যাম’ ভেবে ভুলও করেছিলেন। এ রকম কত ই-মেইলই তো আসে!

কিন্তু ক্লিক করে ভেতরে ঢুকেই বুঝতে পারেন সেটি সাধারণ কোনো ই-মেইল নয়। নিজেকে আফিফের ভক্ত পরিচয় দেওয়া অচেনা ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করে বসেন। শুধু তা-ই নয়, জানান কোনো রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে খেতে বসার আমন্ত্রণও।

প্রথম বার্তায়ই অচেনা ব্যক্তির এমন নিমন্ত্রণ অদ্ভুতই ঠেকেছিল তার কাছে। তাই দেরি না করে এই তরুণ অলরাউন্ডার বিষয়টি জানান যুব বিশ্বকাপ দলের টিম ম্যানেজমেন্টকে। তারাও দ্রুতই নিয়মানুযায়ী ব্যাপারটি অবহিত করেন আইসিসি ও বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে (এসিইউ)।

বিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর (অব.) হুমায়ুন মোর্শেদ ও আইসিসির এসিইউর কর্মকর্তাদের জানানোর সময়ও আফিফকে ই-মেইল পাঠানো ব্যক্তির পরিচয় জানা ছিল না দলের কারোরই। যদিও সেই পরিচয় বেরিয়ে পড়তেও সময় লাগেনি।

কয়েক দিনের মধ্যেই তারা নিশ্চিত হয়ে যান যে আফিফকে ‘নক’ করা ব্যক্তি আইসিসির করা চিহ্নিত জুয়াড়িদের তালিকাতেও আছেন। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটারকে ই-মেইল পাঠানোর উদ্দেশ্য।

একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় আফিফের।

২০১৮ এর যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার দেবব্রত পাল জুয়াড়ির কাছ থেকে তার ই-মেইল পাওয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ই-মেইল পাওয়ার বিষয়টি আফিফ সঙ্গে সঙ্গেই টিম ম্যানেজমেন্টকে জানায়। আমরাও বিলম্ব না করে বিসিবির মেজর মোর্শেদ এবং আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করি।’

অবশ্য সেই সময় তাদের ধারণাতেও ছিল না যে অচেনা ব্যক্তিটি কে হতে পারেন, ‘শুরুতেই তো আর নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল না। তবে এটি জানা ছিল যে জুয়াড়িরা তরুণ ক্রিকেটারদেরও টার্গেট করে থাকে। বিশেষ করে যাদের মধ্যে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতানোর সম্ভাবনা দেখা যায়। সে জন্যই আমরাও দেরি করিনি। জানিয়ে দিই, বলেন দেবব্রত।

জানানোর কিছুদিন পর নিজেরাও জানতে পারেন, ‘পরে আমাদের জানানো হয়, ওই লোক আইসিসিরই চিহ্নিত জুয়াড়িদের একজন।’

ই-মেইল পাওয়ার পরই সে বিষয়ে নিশ্চিত না হলেও ‘রিপোর্ট’ করেছিলেন আফিফ। শীর্ষ তারকার মতো ভুলের ফাঁদেও পড়ে যাননি এই তরুণ ক্রিকেটার। সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় যাকে এখন টি-টোয়েন্টিতে তিন নম্বরে ব্যাটিং করানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত