সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৭:১১

ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত দিবস ১১ ডিসেম্বর

১১ ডিসেম্বর আজ। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিলো ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা।  

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে হানাদার বাহিনী ফেঞ্চুগঞ্জ থানা সদরে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ৭১ সালের ৪ মে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ মরহুম হাজী মো. আছকর আলীর বাড়িতে হামলা চালায় পাকসেনারা। 

আছকর আলীর বড় ছেলে তৎকালীন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও মদন মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আসাদুজ্জামান বাচ্চুকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। এ উপজেলায় ঘাতকদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রথম শহীদ হন আসাদুজ্জামান বাচ্চু। 

ফেঞ্চুগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে জানান, পাক সেনারা সারকারখানা ও মনিপুর চা বাগানে তৈরি করে টর্চারসেল। এছাড়া যুবতী মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে সেখানে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করতো তারা।  

ফেঞ্চুগঞ্জ পশ্চিমবাজারে অবস্থিত কাইয়ার গুদাম ছিল হায়েনাদের বন্দিশালা ও কসাই খানা। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে ধরে এনে বন্দিশালায় নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে মরদেহ ফেলে দেওয়া হতো কুশিয়ারা নদীতে। 

একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা নেওয়ার আলীকে এই বন্দিশালায় রেখে নির্যাতন করে নদী তীরে নামিয়ে ২৮টি গুলি ছুড়া হয় তার দেহে। গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। এমন তথ্য জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম। 

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত হলে ঐতিহাসিক কাইয়ার গুদামে শত শত জনতার ভীড় জমে। গুদামের আশাপাশে ছিল স্বজনহারাদের আর্তনাদ। কালের সাক্ষী এই কাইয়ার গুদামের ভেতরে ঢুকতে এখনো কেউ সাহস পান না। 

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাবার পূর্বে পাকসেনারা উপজেলা সদর ও পাশ্ববর্তী রাজনপুর গ্রামে তাদের বিরাট গাড়ীবহর পুড়িয়ে দেয় এবং অন্য যুদ্ধ সামগ্রী নষ্ট করে ফেলে। পাক হানাদাররা কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নেয়। আর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেয় মুক্তিবাহিনী। 

১০ ডিসেম্বরই হয় ভয়ঙ্কর সম্মূখ যুদ্ধ। এ সময় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কিছু অংশ কুশিয়ারা নদীর ওপর রেলওয়ে সেতু দিয়ে উত্তরপাড়ে অগ্রসর হলে পাকসেনারা তাদের লক্ষ্য করে অতর্কিত গুলি চালায়। এতে সেতুর উপর থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সারিবদ্ধ সদস্যরা মুহুর্তের মধ্যে কুশিয়ারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অসংখ্য সদস্যরা শহীদ হয়েছিলেন তা আজও জানা যায়নি।

কৌশল পরিবর্তন করে পরদিন ১১ ডিসেম্বর উপজেলার কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে পাকসেনাদের লক্ষ্য করে মর্টার সেল নিক্ষেপ করে তাদের ঘায়েল করতে সক্ষম হয় মুক্তিবাহিনী। এক পর্যায়ে মুক্তিযো্দ্ধা ও মিত্রদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে ঠিকতে না পেরে পাকসেনারা স্থানীয় মল্লিকপুর রাস্তা দিয়ে ইলাশপুর হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের ছেড়ে সিলেটের দিকে পালিয়ে যায়। 

এ সময় ধানক্ষেতের ব্যাংকারে মিলেছিলো পাকসেনাদের মরদেহ। এই সম্মুখ যুদ্ধে মুক্ত হয় ফেঞ্চুগঞ্জ। স্বস্তি ফিরে পান মুক্তিকামী মানুষ। 

এবার ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত দিবস পালনে উদ্যেগ নিয়েছে চেতনায় ফেঞ্চুগঞ্জ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি উপজেলার সকলমুক্তি যোদ্ধাদের জন্য এক প্রীতিভোজের আয়োজন করেছে।  

আপনার মন্তব্য

আলোচিত