নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ এপ্রিল, ২০১৬ ১৩:৩১

‘যুদ্ধাপরাধ মামলার’ আসামি আ.লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এক আসামি।  মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে মামলার বাদী এফিডেভিট করে বলছেন তিনি মামলা করেন নি।

ওই আসামির নাম আবুল খায়ের গোলাপ। তিনি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী।  

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ছায়েদুল হক সুমন যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এ প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতার খবর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এ আইনজীবী জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম জানান,  আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তৃণমূল থেকে ইমদাদুর রহমান মুকুলের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কিন্তু ঢাকা থেকে গোলাপকে চেয়ারম্যানপদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপ টানা দু'বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল।  

জানা যায়, একসময় আমেরিকা প্রবাসী হলেও বর্তমানে গোলাপ দেশে অবস্থান করছেন।

গজনাইপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহনেওয়াজ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আবুল খায়ের একাত্তরের একজন প্রতিষ্ঠিত রাজাকার ছিল। এলাকায় সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। তার নেতৃত্বে ১৮ জন হিন্দু ও মুসলিম মানুষকে ধরে নিয়ে বাহুবলের পুটিজুরি এলাকায় হত্যা করেছে। নারী নির্যাতনের অসংখ্য অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

ওই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, সে আমার আপন চাচাত ভাই। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে শুনেছি তার কুকর্ম সম্বন্ধে।

"যুদ্ধাপরাধ তদন্তে এসেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা, তারা মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মানুষের কথা শুনেছেন। অনেক সাক্ষীই মারা গেলেও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছেন কর্মকর্তারা, তাতে তারা প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন যুদ্ধাপরাধের।"

এবার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক একজন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীকে দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা এই আওয়ামীলীগ নেতা শাহনেওয়াজ বলেন, যখন দেশে যুদ্ধাপরাধের জন্য বিচার হচ্ছে; আশা করি এই অপরাধের জন্য জামায়াতের ও বিচার হবে, তখন ইউপি নির্বাচনের এক জন যুদ্ধাপরাধীকে নৌকা প্রতীক দেয়ায় আওয়ামীলীগের আদর্শ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।

তবে আবুল খায়েরের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে যুদ্ধকালে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই মামলাটি দায়ের করেছে।

এ ব্যাপারে আবুল খায়ের গোলাপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৭ জুলাই গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে একই উপজেলার নিশাকুড়ি গ্রামের আছকির উল্লার ছেলে মো. মানিক মিয়া বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারক। এ প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি মো. মোক্তাদির হোসেন দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৩১ জানুয়ারি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি এই তদন্ত প্রতিবেদনের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচার হলে  ১৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় মামলার বাদী মানিক মিয়া একটি বিজ্ঞাপন দেন। তাতে তিনি আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলাটি মিথ্যা বলে দাবি করেন। আগের দিন হবিগঞ্জ নোটারী পাবলিকে এফিডেভিট করে মানিক মিয়া এ দাবি করেন।

হবিগঞ্জ নোটারি পাবলিকে এফিডেভিট করে মানিক মিয়া বলেন, ‘গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আমাকে বাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যা আমি লোকজনের মুখে শুনি। মূলত আমি লেখাপড়া জানি না। আমি আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করিনি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত