শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

১৮ মে, ২০১৬ ১৯:২৫

হবিগঞ্জে তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন

লাভবান হচ্ছেন খামারীরা

হবিগঞ্জের ভাটিপাড়া গ্রামে তুষ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হচ্ছে হাঁসের বাচ্চা। সম্পূর্ণ দেশীয়  পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটানোর খরচ খুবই কম তাই অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন খামারীরা।

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচঙ্গ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম ভাটিপাড়া। এখানে বসবাস করেন  ১৮০টি হিন্দু পরিবার । তারা মূলত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের।  মাছ , শুটকি বিক্রি  ছাড়াও  বোরো চাষ করেই  জীবিকা নির্বাহ করতেন ছোট এই গ্রামের মানুষরা। হাওড় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় বছরের অর্ধেক সময় পানিতে আর অর্ধেক সময় শুকনায় বসবাস করতে হয়। ঋতু বৈচিত্র্যের এই নিয়মে হবিগঞ্জের ভাটিপাড়া গ্রামের মানুষ এক সময়ে  বছরের প্রায় ৬ মাস বেকার থাকতেন। মৎস্যজীবী  হওয়ায় বর্ষাকাল শেষ হলেই তারা বেকার জীবন যাপন করতেন।  কিন্তু বর্তমানে তুষ  পদ্ধতির মাধ্যমে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে একদিকে যেমন  তারা প্রায় সারা বছরই জীবিকা নির্বাহ করতে ব্যস্ত থাকছেন  কাজে কর্মে তেমনি বাড়তি টাকা উপার্জন করছেন খামারীরা।


জানা যায় , ১৯৮০ সালের দিকে ওই এলাকার এক ব্যক্তি তুষ পদ্ধতির মাধ্যমে হাঁসের বাচ্চা ফুটানো শুরু করেন। এরপর একে একে গ্রামের  ১৫০টি পরিবার  বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেন। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের শুধু মাছ ধরা আর গৃহস্থীই নয়, সারা বছরই হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।


খামারী জয় কুমার দাশ বলেন, ৩০ বছর যাবত এই গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে আসতেছি। আগে আমাদের মাছ ধরা ছাড়া কোনো পেশা ছিল না। বর্তমানে বারোমাসই তুষ পদ্ধতিতে ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।  আমরা ভাটিপাড়া গ্রামের মানুষ খুবই দরিদ্র এই তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে আমরা কোনো ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন সরকার যদি আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন তাহলে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের খামার করতে পারবো।

হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর এই পদ্ধতি সম্পর্কে খামারীরা বলেন,  প্রথমে তারা ডিম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিম কিনে এনে বাড়িতেই বাঁশের বেত দিয়ে সিলিন্ডার বানিয়ে এর ভেতরে ডিম রেখে ভারি কাপড় দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ধানের তুষের মাঝে কয়লার আগুন দিয়ে উত্তাপ দেয়া হয়। নিদিষ্ট উত্তাপে কিছুদিন সেখানে রাখার পর ডিম গুলো বাইরে এনে মাঁচায় বিছিয়ে রাখা হয়। কিছুদিন পর ডিমগুলো থেকে বাচ্চা বের হতে শুরু করে।

প্রতিদিনই দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকার ও ব্যবসায়ীরা এসে একদিনের বাচ্চা থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা নিয়ে যান। প্রতি পিছ ১দিনের বাচ্চা ১৬/১৭ টাকা দরে এবং বড় হাঁসের বাচ্চা ৫০ থেকে ১৫০ টাকা দরে  বিক্রি করেন তারা । বয়স ভেঁদে হাঁসের বাচ্চার দাম নির্ধারণ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত