সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ জুলাই, ২০১৬ ০০:৫১

বাপার শোকসভায় ড. ছদরুদ্দিনের নামে শাবির একটি হলের নামকরণের দাবি

ড. ছদরুদ্দিন স্মরণে বাপার শোকসভা

‘অধ্যাপক ডক্টর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও তাঁর কর্মে উত্তরণ ঘটেছিল সমাজের শিক্ষক হিসেবে। বুদ্ধি ভিত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষের বিরল সম্মিলনে তাঁর এক বর্ণাঢ্য জীবন ছিল। গত ২৩ জুলাই সেই জীবনের পরিসমাপ্তি হলেও তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করে নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।’

শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরের বারুতখানা এলাকায় সদ্য প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সভাপতি শিক্ষাবিদ ডঃ ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী স্মরণে ‘মাটির মানুষ প্রাণের মানুষ’ শীর্ষক শোকসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

শোকসভায় বক্তারা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম ‘ডক্টর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর’ নামে নামকরণ এবং ভাষা আন্দোলন ও শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আগামীতে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ডক্টর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর হাত ধরেই সিলেটে উচ্চশিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে এনে দিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। পরিবেশ রক্ষা ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে তাঁর ভূমিকা সিলেটবাসী কখনোই ভুলবে না। উল্লেখ্য ড. মো. সালেহ উদ্দিন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে শোক সভার শুরুতে প্রয়াত শিক্ষাবিদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয় । সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম । মরহুমের জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট আইনজীবী মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ওভারসিজ সিলেটের নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আলম, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মিহিরকান্তি চৌধুরী, প্রয়াত ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর জামাতা অঙ্গিকার বাংলাদেশের পরিচালক অ্যাডভোকেট মঈনুদ্দীন আহমদ জালাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশিষ্ট অনুবাদক গোলাম হোসেন হাবিব (জিএইচ হাবীব), সোদি আরবের কিং খালিদ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুল আসপিয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সরকার সোহেল রানা, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ভেনু ম্যানেজার জয়দ্বীপ দাস সুজক, দৈনিক সবুজ সিলেটের বার্তা সম্পাদক ছামির মাহমুদ, আইনজীবী গোলাম সোবহান চৌধুরী, পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমি সন্তানের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী অধিকার বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার-এর সভাপতি মঞ্জুর কাদের চৌধুরী প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের সন্তান হিসাবে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। আবার শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের অনগ্রসরতা তাঁকে মর্মপীড়া দিতো। তাই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েছেন। পরম মমতা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা তিনি শুরু করেন। সিলেটবাসীর স্বপ্নের এ বিশ্ববিদ্যালয়  দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ করার ইচ্ছে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ি থাকা, বিদেশে থাকা ভালো শিক্ষকদের সিলেট নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতির বাইরে একটি উচ্চ শিক্ষার তীর্থকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়াসে ছদরুদ্দিন অনেকটাই সফল হয়েছিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্য যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনন্য রাখতে প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে তিনি নিরলসভাবে কাজ করছেন। তিনি ছিলেন স্বপ্নচারী, প্রকৃতই অগ্রসর চিন্তাধারক। ভারী তত্ত্বকথা বলতেন না। সহজ সরল কথাবার্তায় নিচের বিশ্বাসটুকু প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি কখনো। জীবনধারণে বিজ্ঞানের চর্চা করলেও ধর্মীয় অনুশীলন তাঁর দৈনন্দিন কর্মসূচীর অংশ ছিল। প্রগতিশীল ও ধর্মভীরুতার সমন্বয় সাধন করে স্নিগ্ধ ও শুদ্ধভাবে জীবনযাপন যে করা সম্ভব তা তিনি দেখিয়ে গেছেন।

এদিকে, শোকসভা পরবর্তী এক সভায় বৃহত্তর পরিসরে ‘ডক্টর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী স্মরণে ‘নাগরিক শোকসভা করার সিদ্ধান্ত হয়। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মো. সালেহ উদ্দিনকে আহবায়ক ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ‘নাগরিক শোকসভা আয়োজন’ কমিটি গঠন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত